📍
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৫ অগাস্ট ২০২৪ হাসিনা শেখের পতন হয়েছে। হাসিনা শেখ পতনের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। এই ব্যানারের নিচে ডান -বাম -জামায়েত- হিযবুত -হেফাজত অংশ নিয়েছিল। অরাজনৈতিক আবরণের ছাত্র অধিকার নেতৃত্বে ছিল। ইউনূসের উপদেষ্টা নাহিদ এই সংগঠনের নেতা। হাসিনা পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেছে। এই সংগঠনে বিএনপি ও বাম সংগঠন গুলো নেই। এই সংগঠন গুলো সরকারি পৃষ্টপোষকতায় রাজনৈতিক দল ‘ কিংস পার্টি ‘ গঠনের কাজে ব্যাস্ত। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘ জাতীয় নাগরিক ‘ কমিটি মাঠে নেমেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সংগঠন। ছাত্রদল – ছাত্রলীগ – ছাত্র ইউনিয়ন বা ছাত্র শিবির জাতীয় সংগঠন। হরহামেশা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বক্তিতা -বিবৃতি চোখে পড়ে। প্রধান গণ মাধ্যম গুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির যে কোন ছোট খাটো কর্মকান্ডকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে চলছে। প্রধান গণ মাধ্যম গুলোর এই অবস্থান হচ্ছে কিংস পার্টি গঠনের ‘ বুদ্ধিবৃত্তিক ‘ অবদান।
📍
এই সপ্তাহে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দিবস হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা দেওয়ার ঢোল-মাদল নিয়ে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার কথা থাকার কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘নাৎসিবাদী একটি রাজনৈতিক দর্শন। নাৎসিবাদের সাথে আওয়ামী লীগের কোন যোগাযোগ নেই বা এই দর্শনের অনুসারী নয়। নাৎসিবাদ সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকেই এই জাতীয় জনসন্তুষ্টি বক্তব্য দেওয়া। বাহাত্তরের সংবিধান কবর দেওয়ার বক্তব্য সাধারণত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দিয়ে থাকে।
📍
৫ আগস্টের পর ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ সুযোগটি চলে গেছে। সেদিন বিপ্লবী সরকারের ঘোষণা , সংবিধান বাতিল , কিংবা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ অথবা ইসলামিক আমিরাত ঘোষণা দেওয়ার মত ঘটনা ঘটিয়ে ফেললে ইতিহাস কি হতে পারতো তা শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা হতে পারে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের অধিনে শপথ নিয়ে সরকার গঠন করে চারমাস পর শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণার ‘ রং ঢঙ করে কোন ফল হবে না। এই সব কিছু রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে বিচারযোগ্য অপরাধ হবে। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার কথা বলেছেন উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম। শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ (বেসরকারি উদ্যোগ) হিসেবেই দেখছি। সরকারের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
ঘোষণা থেকে সরে আসার অন্যতম কারণ হিসেবে ‘ দেশি – বিদেশী ষড়যন্ত্রের ” কথা বলেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই জাতীয় অভিযোগের কোন প্রামানিক ভিত্তি নেই। এখন ইউনুস সরকার ক্ষমতায়। বৈষম্য বিরোধীরা ক্ষমতায়। অন্ততঃ দেশি ‘দেশি ষড়যন্ত্র ‘ উম্মোচনের দাযিত্ব এই সরকারের। কোন রকম ‘ দেশি ষড়যন্ত্রের ” উন্মোচনের কাজ থেকে কেন হাত গুটিয়ে বসে আছেন ইউনুস সরকার ?
📍
সকল রঙঢঙের অবসান ঘটিয়ে ৩০ ডিসেম্বর অতিক্রান্ত মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নাযিলের পথ থেকে সরে আসলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ রক্ষায় নিয়োজিত হয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমতে৵র ভিত্তিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
দেশ অরাজকতায় ভরা। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক অবস্থায় জনগণের অবস্থা খারাপ। আইন শৃঙ্খলার অবস্থা ভাল নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যদ্বয় নিয়ে তামাশা নিয়েও মানুষের মধ্যে নিরব অস্বস্তি কাজ করছে। ইউনুস সরকার এবং কিংস পার্টি মেকানিজম খুব ভাল করতে পারছে না । এই পটভূমিতে শোরগোল তোলা। সচিবালয়ে আগুন, হাসিনার ছবি মুছে ফেলা একই সূত্রে গাঁথা। যেকোন উপায়ে জনগণের দৃষ্টি সামান্য সময়ের জন্য দূরে সরিয়ে রাখার প্রকল্প এই সব।
৩১ ডিসেম্বরের বৈষম্য বিরোধী অনুষ্টান সরাসরি সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মোহাম্মদ ইউনূস সরকার .প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি সরকারি অনুষ্ঠান ? হাসিনা শেখের আমলেও ছাত্রলীগ বা আওয়ামীলীগ ঘরনার অনুষ্ঠান প্রচার করতো। হাসিনার অবসান হলেও হাসিনার ছায়া অপসারিত হয়নি !
📍
——–
সহায়ক তথ্য:
১. আমাদের ঘোষণাপত্র নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে: হান্নান মাসউদ। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো।
২. জরুরি ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব -জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো।
৩.‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোয় পক্ষে–বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো।
৪. আমরা চাই, ঘোষণাপত্রে মুজিববাদী সংবিধান কবরস্থ ঘোষণা করা হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ। ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো।
৫. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন- বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ নয়, হবে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ । ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো।