এক
সলিমুল্লাহ খান পন্ডিত মানুষ। বাংলা একাডেমি ২০২৪ সালে পুরস্কার পেয়েছেন। একাধারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী। সলিমুল্লাহ খানের নানান ভিডিও গণ মাধ্যমে ভেসে বেড়ায়। তিনি সুবক্তা। তথ্য সজ্জিত বক্তা। তথ্য ও অলংকারিক ভাষায় নিজেকে উপস্থাপনে খানের জুড়ি নেই। বহু বছর ধরে অন্যের গায়ে অজ্ঞতার কালিমা লেপে বক্তিতা বিবৃতি দিতে আসছেন সলিমুল্লাহ খান। সলিমুল্লাহ খানের অজ্ঞতার কালিমা লেপন থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , নোমচমস্কি সহ অনেকেই রয়েছেন।
এই ধারাবাহিকতায় ‘ ড. কামালরা সংবিধানের কী বুঝেন’ এমন বক্তব্য দিয়েছেন সলিমুল্লাহ খান। মঙ্গলবার ,২১ জানুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যায় গুলশানের জাতীয় নাগরিক কমিটি ঢাকা উত্তর মহানগর আয়োজিত থানা প্রতিনিধি সভায় সলিমুল্লাহ খান। জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক দল। মোহাম্মদ ইউনুসের পৃষ্টপোষকতায় জাতীয় নাগরিক কমিটি দল হয়ে ‘সাবালক ‘ হওয়ার কসরত করছে। একটি রাজনৈতিক দলের ‘ প্রতিনিধি সভায় ‘ করা অংশ নিয়ে থাকেন ? যে বা যাঁহারা সেই আদর্শের সাথে যুক্ত তাঁদের সম্মিলনে প্রতিনিধি সভা হয়ে থাকে। সলিমুল্লাহ খান কি ‘ কিংস পার্টি ‘ জাতীয় নাগরিক কমিটির সমান্তরালে হাঁটছেন ? বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের সম্মেলন / কাউন্সিলের সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অধিবেশনে দলের সাথে যুক্ত নয় এমন অনেকেই শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসাবে উপস্থিত থাকার রেওয়াজ আছে। তবে প্রতিনিধি সভা নিতান্তই দলকে প্রতিনিধিত্বকারীদের নিয়েই হয়ে থাকে।
বাংলা একাডেমির ২০২৪ সাহিত্য পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে ২৩ জানুয়ারি ২০২৫। পুরস্কার ভোগীদের একজন সলিমুল্লাহ খান। যোগ্য মানুষ সলিমুল্লাহ খান। তবে ২৩ জানুয়ারি পুরস্কার ঘোষণা আর ২১ জানুয়ারিতে কিংস পার্টির ভ্রূণ জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি সভায় উপস্থিতি পুরস্কার প্রাপ্তির কোন সংযোগ প্রমান করা সম্ভব নয়। তবে পুরস্কার প্রাপ্তি এবং সলিমুল্লাহ খানের কাকতলীয় ভাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি সভায় যোগ দেওয়া ইতিহাসের পাদটীকায় থাকবে। নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি সভায় সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন যখন গঠন হলো তখন তারা সবাই ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। সংবিধান বলতে ড. কামাল হোসেনরা কী বুঝেন !” কোন মানুষই সমালোচনার উর্ধে নয়। ড. কামাল কিংবা অন্য যে কোন আইন প্রণেতা বা বুদ্ধিজীবীর ন্যায্য সমালোচানর বাইরে নন। ড. কামালের সাথে রাজনীতির সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে এমন কেউই সচরাচর এত নিম্নভাবে ড. কামাল হোসেনের আইন বিষয়ক প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম। সংবিধান প্রণেতাদের কথা উঠলে প্রতিনিধিত্বকরি হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নাম উঠে আসে। রাজনীতিবিদ ও আইনজিবি হওয়ার কারণে সম্ভবতঃ ড. কামাল হোসেনের নামটি বহুল আলোচিত। জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘ প্রতিনিধি সভা ও ড. কামালদেরকে অজ্ঞ প্রমানের সম্পর্ক কি ?
দুই
জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ হাসিনা শেখ বিরোধী আন্দোলনে সেনা সমর্থিত হয়ে মোহাম্মদ ইউনুস বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সাথে নিয়ে ক্ষমতায় আসে। হাসিনা পতনের প্রশাসনে জামায়াতে ইসলামী , হিজবুত তাহেরি ও বিএনপি প্রশাসনকে দখল করে নেয়। ক্ষমতা দখলের ৫ মাস ( অগাস্ট -ডিসেম্বর ) দেশ বড় ধরণের কোন দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায় নি। গার্মেন্টস শ্রমিক , রিক্সা শ্রমিক , চাকুরীচ্যুত আনসারদের উপর সরাসরি আক্রমণ করে। যেকোন কিছুতেই ‘মব জাস্টিস ‘ লোকজন নিয়ে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মোহাম্মদ ইউনুস সরকারের টিকে থাকার জন্য নিত্য নতুন ইস্যু দরকার হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘ জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণা পত্র ‘ ঘোষণা দেওয়ার দিনক্ষণ প্রচার করে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণা পত্র ‘ দেওয়ার দিন। ‘ জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণা পত্র ‘ এর একটি খসড়া ছড়িয়ে পড়ে। এই খসড়া ছিল ইউনুস সরকারের অভ্যান্তরিন দ্বন্দ্বের বহিঃ প্রকাশ। মোহাম্মদ ইউনুস সরকার প্রাথমিক গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ‘ জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণা পত্র ‘ এর সাথে সম্পর্কের কথা নাকচ করে। ৩১ ডিসেম্বর কোন ঘোষণা পত্র আলোর মুখ দেখেনি। ইউনুস সরকার ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সাথে পর্দার অন্তরালে সমঝোতা হয়। ইউনুস সরকারের তত্বাবধানে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণা পত্র ‘ তারিখ ঘোষণা হয় ১৫ জানুয়ারি ২০২৫। এই ঘোষণা পত্র ফেব্রুয়ারিতে আলোর মুখ দেখনি। তবে এই সময় থেকে আগের যেকোন সময়ের তুলনায় ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিলের স্লোগান উঠে সরকারি মদদে। ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘ মুজিববাদী ‘ সংবিধান হিসাবে বর্ণনা করে বাতিলের মিছিল মিটিং অব্যাহত রয়েছে।
হটাৎ করে কামাল হোসেনদের ( সলিমুল্লাহ খানের ভাষায় ড. কামালরা ) অর্থাৎ ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের সাথে জড়িতদের অযৌক্তিক ভাবে হেয় করার কারণ কি। ১৯৭২ সালের সংবিধানকে খারিজ করার , কবর দেওয়া মোহাম্মদ ইউনুস সরকারের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য জনগণের মনন তৈরী করা সলিমুল্লাহ খানদের কাজ। । ‘ ড. কামালরা সংবিধানের কী বুঝেন’ এই জাতীয় বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিরোধী মনন তৈরির বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণ।