বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

পাকিস্তানী পাঞ্জাবে ‘ রাষ্ট্র ভাষা পাঞ্জাবী চাই ‘ আন্দোলন

লেখক
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান দেশটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত ছিল: পশ্চিম এবং পূর্ব পাকিস্তান। এই দুটি অংশ প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। এর মাঝে ছিল ভারত। পাকিস্তানের এই দুটি অংশ কেবলমাত্র ভৌগোলিকভাবে নয়, অন্যান্য দিক থেকেও ভিন্ন ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় ভাষিক গোষ্ঠী ছিল বাঙালি, যাঁদের বাংলা ভাষায় । অন্যদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় ভাষিক গোষ্ঠী ছিল পাঞ্জাবি, যাঁদের পাঞ্জাবি ভাষায়। স্বাধীন পাকিস্তান বাংলা বা পাঞ্জাবি, কোনো ভাষাকেই জাতীয় ভাষা হিসেবে নির্বাচন করা হয়নি । বরং তারা উর্দুকে জাতীয় ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল । ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে মত দেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তেমন উর্দু জানতেন তেমন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের সকল রাজনৈতিক সভাসমাবেশ বক্তব্য ইংরেজি ভাষায়। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা ইংরেজিতে দিতে হয়েছিল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে। ১৯৪৮ থেকে ৫২ এই সময় কালে ভাষার প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানে বুদ্বিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন চলে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার মিছিলে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হন। এই আন্দোলন ভাষা আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা প্রতিষ্টা করার সংগ্রামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্টার সূচনা বলা বলা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রয়ারি কোন উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছিল না। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সকল ভাষার সমানাধিকারের আন্দোলন ছিল।

পাকিস্তানের সরকারি ভাষা এখনও উর্দু। মজার বিষয় হলো, এই ভাষা মাত্র ১০% পাকিস্তানির মাতৃভাষা। পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় ৪৫-৫৫% মানুষ পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলে। ৪৫-৫৫% পার্থক্যের কারণ হলো সারাইকি ভাষা নিয়ে বিতর্ক। কেউ কেউ এটিকে পাঞ্জাবির উপভাষা বলে মনে করেন। আবার অনেকে এটিকে পৃথক ভাষা হিসেবে গণ্য করেন। পাঞ্জাবিরা পাকিস্তানের রাষ্ট্র ও সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রভাবশালী—রাজনীতি, প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে। তবে, পাঞ্জাবিদের এই আধিপত্য সত্ত্বেও পাকিস্তান স্বাধীনতার পর থেকেই উর্দুকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে । স্কুলে পাঞ্জাবি ভাষায় শিক্ষা নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রের সব সরকারি কাজ ইংরেজি বা উর্দুতে । পাকিস্তানের ১৯৭৩ সালের সংবিধান উর্দুকে একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত পাঞ্জাবের আইনসভায় সদস্যদের পাঞ্জাবি ভাষায় বক্তব্য দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। লেখক হানিফ রামায়, যিনি তখন আইনসভার স্পিকার ছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেন। তবে পরে আবার নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপিত হয়। ১৯৮০ দশক থেকে বুদ্ধিজীবীরা পাঞ্জাবি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম এবং স্কুলে পাঞ্জাবি ভাষা পড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। পাঞ্জাবি ভাষা এখন কেবল দৈনন্দিন কথোপকথনের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পাঞ্জাবি ভাষা আন্দোলন হলো কিছু পাঞ্জাবি বুদ্ধিজীবীদের সেই আকাঙ্ক্ষা, যেখানে তারা ক্ষমতার ক্ষেত্রে উর্দু ও ইংরেজির পরিবর্তে পাঞ্জাবি ভাষার ব্যবহার বাড়াতে চান। এটি একটি নগরভিত্তিক আন্দোলন। এই আন্দোলন কয়েক দশক ধরে চলছে। কিন্তু কখনোই আন্দোলন শক্তিশালী বা গণআন্দোলনআন্দোলনে রূপান্তরিত হয়নি। তবে এই আন্দোলনের কর্মীরা পাঞ্জাবি ভাষায় কিছু আধুনিক পরিভাষা তৈরি করেছেন এবং তারা কিছু জার্নাল ও বই প্রকাশ করেন। পাঞ্জাবি ভাষা আন্দোলনকারীরা প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করে আসছে এক কয়েক দশক ধরে।

সূত্র :

১. https://punjabics.com/inner/inner/demand.php
২. https://punjabilanguagemovement.org/


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!