বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর স্থগিত স্থগিত ঘোষিত পুরস্কার পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমির পুনর্বিবেচনায় পূর্ব ঘোষিত তালিকা থেকে তিন জন বাদ পড়েছেন। পুরস্কার থেকে বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ হাননান (মুক্তিযুদ্ধ), ফারুক নওয়াজ (শিশুসাহিত্য) এবং সেলিম মোরশেদ (কথাসাহিত্য)। পুরস্কার স্থগিত হওয়ার পরপর সেলিম মোরশেদ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দেন। কোন ভিত্তিতে পূর্বে ১০ জন মনোনীত হয়েছিলেন সেই নীতিমালা যেমন অস্পষ্ট। তেমনি কোন নীতিমালার ভিত্তিতে তিনজন ব্যাড পড়লেন সেই বিষয়টি অস্পষ্ট। কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই পূর্বের তালিকা থেকে তিনজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ২৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, তালিকায় নাম থাকা কারও বিষয়ে গণহত্যা ও জনবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে পুরস্কার বাতিল করা হবে। বাংলা একাডেমির প্রধান নীতি নির্ধারক হচ্ছেন মোহাম্মদ আজম। মোহাম্মদ আজমের বক্তব্যকে আমলে নিলে পূর্ব ঘোষিত তালিকা থেকে বাদ পরে যাওয়া তিনজন কি গণহত্যা ও জনবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ”‘রয়েছে ?
পুরস্কার নির্ধারণের সাথে যুক্ত সকলের বক্তব্য গণমাধ্যমে আসেনি। তবে যে দুই জনের বক্তব্য এসেছে তা মোহাম্মদ আজমের বক্তব্যের বিপরীত !একাডেমির পুরস্কারের জন্য গঠিত বোর্ডের সদস্য মোরশেদ শফিউল হাসান। মোরশেদ শফিউল হাসান বাংলা একাডেমির ফেলো। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরস্কারসংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে একটি পোস্টও দিয়েছেন। মোরশেদ শফিউল হাসানের এই বক্তব্য গণ মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। মোরশেদ শফিউল হাসানবলেছেন পুরস্কারের ঘোষণা স্থগিত করে পুনর্বিবেচনা বিষয়টি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের জন্য বিব্রতকর। এটা পদত্যাগের প্রসঙ্গ নয়। পুনর্বিবেচনায় অংশগ্রহণ করব না, এটা জানিয়েছি।’ বাংলা একাডেমির নির্বাহী কমিটির পদ থেকে ২৯ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন কবি সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে পদত্যাগের কথা জানান। সাজ্জাদ শরিফ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি ও একাডেমির পদগুলোর যে অমর্যাদা ঘটেছে, সে অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে যাওয়া নৈতিকভাবে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪: বিতর্কে স্থগিত ঘোষণা
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর তালিকা প্রকাশের একদিন পরেই পুরস্কার ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে। ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত এই তালিকায় ১০ জন সাহিত্যিকের নাম ছিল, তবে কোনো নারী সাহিত্যিককে মনোনীত করা হয়নি। মনোনীতদের মধ্যে ছিলেন:
- কবিতায় মাসুদ খান
- কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ
- নাটকে শুভাশিস সিনহা
- প্রবন্ধে সলিমুল্লাহ খান
- শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ
- অনুবাদে জি এইচ হাবীব
- গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া
- বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান
- মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান
- ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ
তবে পুরস্কারের ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে নারীদের অনুপস্থিতি এবং কয়েকজন মনোনীতের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের কারণে পুরস্কার স্থগিত করা হয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলা একাডেমির মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। বারবার অযোগ্য প্রার্থীদের পুরস্কার প্রদান এবং নীতিমালার দুর্বলতার কারণে এই বিতর্ক ক্রমশ গভীর হচ্ছে।

বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারে নারীদের বঞ্চনা
বাংলা একাডেমির ২০২৪ সালের সাহিত্য পুরস্কারের তালিকায় কোনো নারী সাহিত্যিক নেই। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এর আগে ২০২২ সালেও একই অভিযোগ উঠেছিল। পুরস্কার যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়ার কথা বলা হলেও, বাস্তবে এটি গুরুত্ব, পছন্দ, পক্ষপাত এবং ষড়যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। বারবার নারীদের উপেক্ষা করা মানে তাদের সাহিত্যকর্মকে গুরুত্বহীন করা এবং তাদের সৃজনশীলতাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বঞ্চিত করা। বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়, তবে নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষ সাহিত্যিকদের একচেটিয়া প্রাধান্য দেওয়া প্রতিষ্ঠানটির পশ্চাৎপদ মানসিকতার প্রতিফলন। সমাজ ও সাহিত্যকে এগিয়ে নিতে স্বচ্ছ, সঠিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
একুশে বইমেলা ২০২৫: প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ নিয়ে প্রকাশকদের ১০ দফা দাবি
একুশে বইমেলা ২০২৫-এ প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। ‘সুবিচারপ্রত্যাশী প্রকাশকবৃন্দ’ নামে পরিচিত প্রকাশকদের একটি দল বাংলা একাডেমির কাছে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। ১২ জানুয়ারি, রবিবার, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম এবং মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিনের কাছে এসব দাবি উপস্থাপন করা হয়। প্রকাশকরা অভিযোগ করেন, যাচাই-বাছাই ছাড়াই এবং অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে স্টল বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম জানান, “ট্যাগিং বাংলা একাডেমি করেনি,” এবং মেলা পরিচালনা কমিটি আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৮টি প্রকাশনার নাম প্রকাশ পেয়েছে, যেগুলোর জন্য প্যাভিলিয়নের পরিবর্তে সাধারণ স্টল বরাদ্দের দাবি তোলা হয়েছে। এসব প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে: অনিন্দ্য প্রকাশ, অন্যপ্রকাশ, আগামী প্রকাশনী, তাম্রলিপি, সময় প্রকাশন, পাঠক সমাবেশ, কাকলী প্রকাশনী, এবং বিশ্বসাহিত্য ভবনসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। প্রকাশকরা অভিযোগ করেন, স্টল বরাদ্দের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির, কিন্তু এ বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব এবং পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের কারণে পুরনো ও সুপ্রতিষ্ঠিত প্রকাশকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।