শেখ হাসিনার পতনের পরে বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাঙা হয়েছে। এই স্মৃতি গুলোর সাথে শেখ হাসিনার সম্পর্ক নেই। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবেই জড়িত। দেশের বহু প্রতিষ্টানের নাম পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তন গুলোর অনেক গুলোর পরিবর্তন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতি পূর্ন ছিল। তবে পরিবর্তনের মারমূখী ধাঁচ গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল। হাসিনার পতনের অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রায়োগিক ক্ষমতা। চলে যায় ইসলামী দল গুলোর হাতে। শুরু হয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাজনীতির উপর বিভিন্ন ধরণের আক্রমণ। এই আক্রমণের ধরণ গুলো বৈচিত্রময়। নারী অভিনেতাদের দিয়ে শোরুম উদ্বোধন করতে না দেওয়া এবং নারী ফুটবল দলকে খেলতে না দেওয়া জাতীয় বিষয় গুলো পুরোপুরি রাজনৈতিক একটি বিষয়। এই গুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নারীদের বিকাশ হতে না দেয়া রাজনীতি বহুবছর ধরে চলে আসছে। নারীর অবদমনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ধর্ম এই অঞ্চলে ব্যাবহৃত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সামনে বেগম রোকেয়ার একটি গ্রাফিতির চোখ ও মুখ কালো রঙে ঢেকে দেওয়া হয়। এই ঘটনা ১৯ নভেম্বর বিকেলে ঘটে এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। বেগম রোকেয়ার ছবিতে কালো রঙ করেছেন। তার যুক্তি ছিল, ছবির মুখগুলো তার নামাজের সময় সমস্যা তৈরি করছিল। তবে পরবর্তীতে তিনি জানান যে, বারান্দায় গেলে ওই মুখগুলো তাকে বিরক্ত করত, তাই তিনি সেগুলো ঝাপসা করে দিতে চেয়েছিলেন। রোকেয়ার ছবিতে কালি লেপে এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি শিক্ষার্থীর কাজ নয়। .আপাতঃ ভাবে একজনের কাজ হলেও কাজটি সংগঠিত চিন্তার । এই কাজ নারীর স্বাধীনতা ও নারী জাগরণের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। তিএই কাজ নারী বিদ্বেষী এবং লিঙ্গীয় রাজনীতির এক বহিঃপ্রকাশ । এর পেছনে ধারাবাহিকভাবে নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এবং ধর্মীয় বক্তৃতাগুলোর ভূমিকা রয়েছে। গত কিছু দিন যাবৎ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার দাবি জানানো হচ্ছে। রোকেয়ার নাম পরিবর্তনের দাবি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বেগম রোকেয়ার নাম পরিবর্তনের দাবি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং ধর্মীয় রাজনীতির বাড়াবাড়ির ছাপ। বাঙালি মুসলমান নারীর শিক্ষা ও স্বাধীনতার পথিকৃৎ ছিলেন বেগম রোকেয়া। তিনি ছিলেন নারীর শিক্ষার প্রথম প্রচারক এবং সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে যে বার্তা উঠে আসে তা হলো, বর্তমান সমাজে নারী অধিকার এবং স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক কখনোই থেমে থাকে না। বেগম রোকেয়া নিজের সময়ের সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন, সেই কাজ অপূরিত রয়ে গেছে।
দুই
সোমবার , ১১ ফেব্রুয়ারি ২৫, কিছু শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ বহাল চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বক্তব্যে বলা হয়েছে, ” ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় শহরে হওয়ায় ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে।” রাষ্টের মদদ ও থাকার করণেই এই জাতীয় সংবাদ সামনে আসছে। ছাত্র সম্মেলনের বক্তব্য সামান্য দুমড়ানো। রংপুর বিশ্ববিদালয়ের ছাত্র প্রায় দশ হাজার। ১০হাজারের অতি ক্ষুদ্র অংশ ১০০/১৫০ ছাত্র সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিল। তবে সংগঠিত ১০০/১৫০ ছাত্র অনেক বেশি শক্তিশালী।
এই বক্তব্য দুটি দুমড়ানো আলাপ।
(১) ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে।’ – নাম পরিবর্তনের জন্য এই যুক্তি অতি দুর্বল। রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার সিদ্বান্ত হয়েছিল ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। এই সময়ে রংপুর জেলা ছিল। রংপুরকে বিভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০৯ সালের মাঝামাঝি। ২০১০ সালে বিভাগ হিসেবে প্রশাসনিক কাজ শুরু হয় রংপুর বিভাগের। তাই ২০০৮ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার সাথে বিভাগীয় শহরকে মিলিয়ে দেখার প্রবণতা অভিলাসী।
(২) ২০০৮ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি নথিতে ছিল। ২০০৯ সালে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। এবং ২০১১ সালে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বছর ২০০৮-০৯ এর সময় কালীন সময়ে ” রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় ‘ এর অস্তিত্ব শুধু কাগজে ছিল।
(৩) দেশের নামকরণের রাজনীতি রয়েছে। শেখ হাসিনা এই রাজনীতি নোংরা ভাবে করেছেন। তবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকরণে ‘ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ খুঁজে বের করা কঠিন। রোকেয়ার রাজনৈতিক দর্শনের বিপরীতে ছিলেন শেখ হাসিনা। উপমহাদেশের প্রথম নারীবাদী, যিনি ধর্ম এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা উভয়কেই আক্রমণ করেছিলেন বেগম রোকেয়া। শেখ হাসিনা ধর্মীয় রাজনীতির পৃষ্টপোষক ছিলেন। শেখ হাসিনার পতনে হাসিনার পৃষ্টপোষকতায় বেড়ে উঠা ধর্মের রাজনৈতিক দল গুলোর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এখন এই শক্তি গুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
(৪) দুটি সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিচয় দিতে অস্বস্তিতে ভোগার কোন যোক্তিক কারণ রয়েছে কি ? এযাবৎ কালে ‘ অস্বস্তি ভুগী ‘ দের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সংবাদ সম্মেলনকারীদের কাছে কত জন ‘ অস্বস্তিতে ভুগী ‘ অভিযোগ করেছেন তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি। ঢাকা কলেজ ১৮৪১ , চট্টগ্রাম কলেজ ১৮৬৯, রাজশাহী কলেজ ১৮৭৩ প্রতিষ্টিত হয়েছিল। এই নামেই এখন পর্যন্ত কলেজ গুলো শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছে। এই কলেজ গুলোর প্রতিষ্টার বছর প্রবেশদ্বারে লেখা রয়েছে। ঢাকা কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাঁটা পথের দূরত্ব ৫/৭ মিনিট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্টায় ঢাকা কলেজের জায়গা – জমির অনুদান রয়েছে। রাজশাহী কলেজ ত্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুরুত্ব ৫ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুরুত্ব ২২ কিলোমিটার। এই সব গুলো কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। এই কলেজ গুলোতে স্নাতক পর্যায়ের এই সুযোগ রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রংপুরকে বিভাগ করার বহু আগে থেকে। ঢাকা – চট্টগ্রাম -রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ‘অস্বস্তি ভুগী ‘ হওয়ার সংবাদ চাউর হয়নি। এই যুক্তি অতি সংকীর্ণতাবাদী। এই যুক্তি ধোপে টেকে না।
তিন
নভেম্বর ২৪ সালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ পুনর্বহালের দাবিতে গণস্বাক্ষরসহ শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী। গণ মাধ্যম থেকে জানা যায় না ‘ গণ সাক্ষর ‘-এ কজন সাক্ষর করেছিলেন , তাঁদের পরিচয় বা কি ? কালের কণ্ঠ রোকেয়ার নাম পরিবর্তন কারীর একজনের বক্তব্য তুলে ধরেন ” বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামের কারণে এটা কোথায় কেউ জানে না, চেনেও না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধু নারীদের জন্য, এমনটিও অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করছে না, আমরা চাই দ্রুত এর নাম পরিবর্তন করা হোক। ” – এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে নাম পরিবর্তনকারীদের মনন ও চিন্তার দার্শনিক দিক ফুটে উঠেছে। পুরো বক্তব্যই আলোচনার দাবি রাখে।
(১) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান : রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুরে অবস্থিত একথা কারো অজানা। সবাই সব কিছু জানবে এমন নয়। তবে বিস্ববিদ্যালয়ে গমন ইছুক ছাত্র ও অভিভাবকরা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। রোকেয়া বিস্ববিদ্যালয়ে সারা দেশের ছাত্র-ছাত্রী পরে থাকেন। যদি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সাধারণ মানুষের না জানা থাকতো তা হলে সারাদেশ থেকে ছাত্ররা কি ভাবে ভর্তির জন্য আসলে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অন্য সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মতই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। মানুষ যদি এই বিশ্ব বিদ্যালয়ে অবস্থান নাই জানতো তাহলে ভর্তির জন্য বিপুল প্রতিযোগিতা কি ভাবে সম্ভব !
(২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কি নারীদের জন্য : সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ একটি নামি শিক্ষা প্রতিষ্টান। কেউ কি কস্মিন কালে জিজ্ঞাসা করেছে এই কলেজ কি শুধু ছেলেদের জন্য ? রংপুরের কারমাইকেল কলেজ , বরিশালের ব্রজমোহন – বিএম কলেজ , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এই জাতীয় বহু প্রতিষ্টান পুরুষদের নামে। কেউ কি কখনো জিজ্ঞাসা করেছে এই প্রতিষ্টান গুলো কি শুধু পুরুষদের জন্য। এই প্রশ্ন নারী বিদ্বেষী। এই বিদ্বেষের ভিত্তিভূমি ধর্মীয় বিষোদাগার।
(৩) বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করছে না : বিশ্ববিদ্যালয় কোন অঞ্চল বা গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। শিক্ষা ও জ্ঞানের ভুবনে আঞ্চলিকতা বড় বেশি বেমানান। বেগম রোকেয়া রংপুরের মানুষ ছিলেন। তিনি আলোকিত মানুষ ছিলেন। বেগম রোকেয়ার আলোচনা আসলেই রংপুরের নাম উঠে আসে।
চার
রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার পিছনের ইতিহাস আঁকাবাঁকা। রংপুর কারমাইকেল কলেজ ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্টিত কলেজ। স্নাতক পর্যায়ে পড়াশুনার জন্য এই কলেজের ঐতিহ্য পুরানো। যখন দেশে ৫/৬টি সরকারি বিস্ববিদ্যালয় তখন বৃহত্তর রংপুর -দিনাজপুরে শিক্ষা বিস্তারে এই প্রতিষ্টানের অনেক অবদান রয়েছে। তৎকালীন সময়ে বাড়ি বা বাড়ির কাছে [ রংপুর- দিনাজপুর ] থেকে স্বল্প খরচে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশুনার সুযোগ শিক্ষা বিস্তারের সহায়ক ছিল। ২০০১ সালে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে “রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আইন পাস হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছিলেন। সেই মেয়াদে ২০০১ সালে রংপুরে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হয়। এই সরকার শেখ হাসিনার ভিত্তি দেওয়া প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। একটি ভিত্তিপ্রস্তর দীর্ঘদিন সাক্ষী হয়ে ছিল। ২০০৬ সালে ২০০১ সালের রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ (২০০১ সনের ৩৪ নং আইন) এবং সরকারী কারমাইকেল কলেজ বিলুপ্ত করে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে “রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়” নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইন পাস হয়। পরবর্তীতে এ আইন বাস্তবায়ন না হয়ে ২০০১ সালের পাসকৃত আইনে কারমাইকেল কলেজ থেকে অধিগ্রহণকৃত জমিতে ২০১১ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ২০০৮ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করা হয়। দেশের কোন কিছুই সরল পথে ক্লে না। রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সেই আঁকাবাঁকা পথে প্রতিষ্টিত হয়েছে।
রোকেয়া বিশ্ববিদালয়ের নাম পরিবর্তন আখাঙ্খিরা “রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” এবং ” রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়” কে একাকার করে ফেলার অভিযোগ এনেছেন। এই অভিযোগ দিয়ে রংপুরের আঞ্চলিকতায় ঘোরটোপে কিছু মানুষকে রোকেয়া বিরোধী অবস্থানে নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই শহরে ৫/৭ মাইলের ব্যাবধানে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি অযোক্তিক। রংপুর বিভাগে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ থাকে তবে কেন কুড়িগ্রাম বা লালমনির হাট কিংবা পঞ্চগড়ের কথা ভাবা হচ্ছে না। সমস্ত শরীরের রক্ত মুখে জড় হওয়া যেমন স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয় তেমনি রংপুর শহরকে কেন্দ্র করে সব কিছু গড়ে উঠার দাবি পরিবেশ সম্মত নয়। সব কিছু এক জায়গা বা অল্প দুরুত্বে গড়ে উঠার যন্ত্রনা বাজার জন্য ঢাকা শহর ভাল উদাহরণ।
পাঁচ
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন এই উপমহাদেশের প্রথম নারীবাদী, যিনি ধর্ম এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা উভয়কেই আক্রমণ করেছিলেন। তিনি বিশেষ কোনো ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থকে নয়, বরং সকল ধর্ম এবং তার ধারক-বাহক পুরুষতন্ত্রকেই সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তাঁর নাম নিয়েই ঘটেছে এক বড় বিভ্রাট। উপমহাদেশের প্রথম নারীবাদীর নামের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই কৃত্রিমভাবে আরোপিত। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল মোসাম্মৎ রুকাইয়া খাতুন, এবং বিয়ের পর তিনি মিসেস আর. এস. হোসেন নামে পরিচিত হন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর, সমাজ তাঁকে একটি ‘সম্ভ্রান্ত মুসলিম ভদ্রমহিলা’ হিসেবে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে তাকে ‘বেগম রোকেয়া’ নামে পরিচিত করা হয়। বর্তমানে, ‘বেগম রোকেয়া’ এবং ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’—এই দুটি নামই সমাজে প্রচলিত, তবে এর কোনো একটি নামও তাঁর প্রকৃত পরিচয়কে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না। এই নামজনিত বিভ্রাট আমাদের অঞ্চলের অবিকশিত এবং বিভ্রান্ত নারীবাদী চিন্তাধারার প্রতীক হিসেবে সামনে আসে। ‘রোকেয়া’ নামের পরবর্তী দীর্ঘ শূন্যতার প্রেক্ষাপটটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রোকেয়া তার কর্ম জীবনে মুসলিমদের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তৎকালীন মুসলিমদের বিরোধিতায় কলিকাতায় বেগম রোকেয়ার কবর দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। সেই বাধা এখনো ভিন্ন অবয়বে অব্যাহত আছে। এই বাধা গুলো কখন রোকেয়ার ভাস্কর্যে কালি লেপন , কখনো রোকেয়ার নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন, কখনো নারীদের ফুটবল খেলায় বাধা দেওয়া , কখন অভিনেত্রীদেরকে কাছে বাধা মত স্বরূপে দেখা দেয়।
নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। রোকেয়ার নামে নামে বিশ্ববিদ্যালয় বেগম রোকেয়ার লেখা ও কর্মের প্রতি সন্মান ও স্বীকৃতি । বেগম রোকেয়ার বাড়ি রংপুরে হওয়ায় তাঁর নামের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় একটি আলাদা মর্যাদা পেয়েছে। নাম পরিবর্তনের দাবির পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা অতি আবশ্যক।
সহায়ক তথ্য সূত্র
১. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। প্রথম আলো।
২. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আবেদন। ১৮ নভেম্বর, ২০২৪। কালের কণ্ঠ।
৩..বেগম রোকেয়ার গ্রাফিতিতে কালো রং দেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন শিক্ষার্থী: প্রাধ্যক্ষ। ২০ নভেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো।
৪.সরকার কি রংপুরের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভুলেই গেছে। ২২ জানুয়ারি ২০২২। প্রথম আলো।