বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

ট্রাম্প – পুতিনের ইউক্রেন ভাগাভাগি

লেখক
বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে। অতীতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো “গণতন্ত্র” এবং “মানবাধিকার” রক্ষার নামে শোষণ ও লুণ্ঠন চালিয়েছে, তবে ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি শাসন করার কৌশলে আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি পানামা, গ্রীনল্যান্ড, এবং কানাডা সংযুক্ত করার পরিকল্পনা বা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার মতো সরাসরি বক্তব্য রেখেছেন।বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে, সৌদি আরবে রুশ-আমেরিকান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ঠিক একই সময়ে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তুরস্ক সফর করেছেন এবং তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

অন্যদিকে, ৭ ফেব্রুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সরকারের কাছে একটি খসড়া চুক্তি জমা দিয়েছে। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, ইউক্রেনের খনিজ, তেল, গ্যাস এবং অবকাঠামোর আয়ের ৫০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করবে। এর বিনিময়ে তারা যুদ্ধোত্তর আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে এবং পুনর্গঠন তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ইউক্রেনের সম্পদ উত্তোলনের লাইসেন্স থেকে যে আয় হবে, তার ৫০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বরাদ্দ করতে হবে। এছাড়া, ইউক্রেনের কোনো রপ্তানিযোগ্য খনিজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া অন্য দেশে বিক্রি করা যাবে না।এছাড়াও, খসড়া চুক্তিটি স্পষ্ট করে যে, ইউক্রেন যদি তার আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সম্পদ জব্দ করার অধিকার পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের পুনর্গঠন তহবিল এবং আর্থিক বিষয়গুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে, ইউক্রেনকে প্রতি মাসে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। চুক্তির কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষের তারিখ নেই, অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘকাল ধরে স্থায়ী হতে পারে।

এই চুক্তি অনেক বিশেষজ্ঞের মতে “ঔপনিবেশিক চুক্তি” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে এক ঘণ্টার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেছিল, না হলে তাদের সহায়তা বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে, ইউক্রেনের সরকার এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছে। ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল, যেখানে যুদ্ধের কারণে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে, এবং দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের পথে। এর মাঝে, পশ্চিমা শক্তির দিক থেকে আসা চাপ এবং প্রস্তাবিত চুক্তিগুলো ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার প্রতি বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!