বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৭ অপরাহ্ন

রিচার্ড ডকিন্সের দ্য সেলফিশ জিন । অনুবাদক কাজী মাহবুব হাসান।

লেখক
বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রিচার্ড ডকিন্সের দ্য সেলফিশ জিন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী বই। ১৯৭০ এর দশকে প্রকাশিত হওয়ার পর এটি বহু ভাষায় অনূদিত এবং লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন কাজী মাহবুব হাসান এবং প্রকাশক শুদ্ধস্বর। বইটি জীববিজ্ঞান এবং প্রকৃতির প্রকৃত মেকানিজম সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। বইটির মূল বক্তব্য , প্রাকৃতিক নির্বাচন শুধু প্রাণী বা উদ্ভিদে নয়, বরং এটি জিনের স্তরে কাজ করে। ডকিন্স দাবি করেন, প্রাকৃতিক নির্বাচন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জিনগুলির স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়। এর ফলে প্রাণী বা উদ্ভিদের আচরণ মূলত তাদের জিনের স্বার্থে চলে। ডকিন্স “স্বার্থপর জিন” ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে তিনি আত্মত্যাগ (আলট্রুইজম) এবং স্বার্থপরতা (সেলফিশনেস) এর সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি প্রমাণ করেন, নিজের স্বার্থ রক্ষায় প্রাণী বা উদ্ভিদ অনেক সময় একে অপরকে সাহায্য করে, যা তাদের জিনের টিকিয়ে রাখার জন্য উপকারী।

ডকিন্স শুধু জেনেটিক্সের বিষয়ে কথা বলেননি, তিনি প্রাণীজগতের আচরণের নতুন দৃষ্টিকোণও উপস্থাপন করেছেন। তিনি জিনের দৃষ্টি কোন থেকে প্রাণীদের আচরণ বিশ্লেষণ করেছেন এবং গোষ্ঠী নির্বাচনের তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন। তার মতে, প্রাণী বা উদ্ভিদরা একে অপরকে সাহায্য করে না, বরং তারা তাদের নিজের জিনের স্বার্থে কাজ করে। তবে, বইটি কিছু ক্ষেত্রে বিষয় নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। বইয়ের কিছু ধারণা, যেমন “কিন সিলেকশন” এবং “মিমেটিক্স”, পরবর্তী সময়ে সন্দেহের মুখে পড়েছে। যদিও বইটির কিছু তত্ত্বের উপর প্রশ্ন উঠেছে, দ্য সেলফিশ জিন এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বই। এটি জীববিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিষয়টি আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। ডকিন্সের সাহিত্যিক দক্ষতা এবং বিজ্ঞানে তার প্রজ্ঞা তাকে প্রভাবশালী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বইটি বিজ্ঞানপ্রেমী এবং জীববিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য একটি চমৎকার পাঠ্যসামগ্রী।

রিচার্ড ডকিন্স (জন্ম ২৬ মার্চ ১৯৪১) একজন ব্রিটিশ বিবর্তনবিজ্ঞানী, প্রাণিবিজ্ঞানী, বিজ্ঞান যোগাযোগকারী এবং লেখক। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ কলেজের এমেরিটাস ফেলো এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব সায়েন্সের অধ্যাপক ছিলেন। রিচার্ড ডকিন্সবই দ্য সেলফিশ জিন (১৯৭৬) বিবর্তনের জিন-কেন্দ্রিক ধারণা জনপ্রিয় করেছে এবং “মিম” শব্দটি সৃষ্টি করেছে। ডকিন্স সৃষ্টিতত্ত্ব এবং বুদ্ধিমান ডিজাইনের সমালোচনা করেন এবং তিনি একজন বিশিষ্ট নাস্তিক। ১৯৮৬ সালে দ্য ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার বইয়ে তিনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরেন, যেখানে তিনি বিবর্তনীয় প্রক্রিয়াগুলিকে অন্ধ ওয়াচমেকারের মতো বর্ণনা করেন। ২০০৬ সালে দ্য গড ডিলিউশন বইয়ে তিনি লিখেছেন, যে অতিপ্রাকৃত সৃষ্টিকর্তা সম্ভবত অস্তিত্ব নেই এবং ধর্মীয় বিশ্বাস একটি বিভ্রম। ডকিন্স ২০০৬ সালে রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশন ফর রিজন অ্যান্ড সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার স্মৃতিচারণমূলক দুটি বইও প্রকাশ করেছেন।


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!