আলী রীয়াজ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান। শনিবার ১ ফেব্রুয়ারি ২৫, রাজধানীর ইস্কাটনের আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন কেন্দ্রের মিলনায়তনে ‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড গুড গভর্নেন্স আয়োজিত সুশাসন ও গণতন্ত্র’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যেদেন আলী রীয়াজ। সংবিধান নিয়ে নানান বক্তিতা দিচ্ছেন আলী রীয়াজ। তিনি দাবি করেন ” ১৯৭২ সালের সংবিধানের মধ্য দিয়েই না-কি স্বৈরতন্ত্র প্রবর্তন করা হয়। ” আলী রীয়াজ পেশায় শিক্ষক ও সাংবাদিক। তার বক্তব্য গুরুত্বের সাথে না নেওয়া অসঙ্গত হবে। বায়তুল মোকারমের সামনে মাইক হাতের উদাম গলায় যা কিছু বলা সম্ভব সেই সমস্ত বক্তৃতা থেকে আলী রীয়াজের বক্তৃতার গুণ তথ্যগত উৎকর্ষতা বেশি থাকার কথা। সবাই আশা করেন থাকেন আলী রীয়াজের মত মানুষেরা তথ্য উপাত্ত দিয়েই কথা বলবেন। আলী রীয়াজের বলতে ব্যার্থ হয়েছেন ১৯৭২ সালের সংবিধানের কোন ধারা-বলে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র প্রবর্তিত হয়ে সম্ভব ছিল বা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় ব্যাবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানের কোন ধারা বলেই বাকশাল ব্যাবস্থা প্রবর্তন সম্ভব ছিল না। যার কারণেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর প্রয়োজন হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর পরের সংবিধান এবং ১৯৭২ সালের আদি সংবিধান এক জিনিস নয় , এই সাধারণ সত্যটি আলী রীয়াজ বেমালুম চেপে গেছেন।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘১৬ বছর ধরেই কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭০ সালের পরে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরতন্ত্র শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসে।’” ( বণিক বার্তা ) এই বক্তব্যে আলী রীয়াজ কি বোঝাতে চেয়েছেন তা অস্পষ্ট ও লেজে গোবরে। ১৯৭০ সালে শেখ মুজিবর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন না। সেই সময় অখন্ড পাকিস্তানে ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন চলছিল। ১৯৭১ সালে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। শেখ মুজিবর রহমান ক্ষমতায় ১৯৭২ সাল থেকে। তাই ১৯৭০ সালকে টানা ধান বানাতে শিবের গীতের মত। “শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরতন্ত্র শেখ হাসিনার মধ্যে আবার যে ফিরে এসেছে” এ বক্তব্য রাস্তায় ভাল শোনা যায়। কথাটির মধ্যে কাব্যিক ভাব রয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনের প্রতি মানুষ ক্রূদ্ধ। সাধারণ মানুষ এই জাতীয় বক্তব্য লুফে নিতে পারে। কিন্তু এই জাতীয় কাব্যিকতা দিয়ে রাষ্ট্র ও সংবিধান আলোচনা অচল।
১৯৭২ সালের সংবিধানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সংবিধান বাংলাদেশে বসবাসরত পার্বত্য জাতি সুমুহের স্বীকৃতি দেয়নি। সংবিধানের বহু সংশোধনী হয়েছে কিন্ত শেখ মুজিবর এবং পরবর্তী সকল শাসকরা পার্বত্য জাতি সুমুহকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ব্যাপারে একমত থেকেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান কাউকে সকল ক্ষমতার মালিক বানায়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তুলনামূলকভাবে খুব কম সময়ে শেষ হলেও তার ব্যাপ্তি বিশাল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ঘৃণা করার অধিকার মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ভুল ও মিথ্যা উপস্থাপন মেনে নেওয়া অসম্ভব। জো বাইডেনের আমলে USAID Elections and Political Process Strengthening (CEPPS) বাংলাদেশকে। ২১ মিলিয়ন বরাদ্দ ছিলো বাংলাদেশের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইডেনটিফিকেশন নম্বর ছিল 72038822 LA 00001 । ‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড গুড গভর্নেন্স আলী রীয়াজদের মত অনেককে দিয়েই সেমিনার করিয়ে আসছে। ‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড গুড গভর্নেন্সকে স্পষ্ট করতে হবে USAID তারা পেয়েছে কিনা ? পেয়ে থাকলে সেই টাকা কিভাবে ব্যাবহৃত হয়েছে।
সহায়ক তথ্য সূত্র :
১. সেমিনারে ড. আলী রীয়াজ -’৭২-এর সংবিধানের মধ্য দিয়েই দেশে স্বৈরতন্ত্রের প্রবর্তন। ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫। বণিক বার্তা।
২.৭২’র সংবিধানের মধ্য দিয়েই দেশে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়: ড. আলী রীয়াজ। ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।
বাংলা ট্রিবিউন