বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৮ অপরাহ্ন

ইলন মাস্কের সাথে ইউনূসের ফোনালাপ এবং স্টারলিংক

সমসমাজ ডেস্ক
শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো একটি পুরানো প্রবাদ। ১৩ ফেব্রুয়ারিতে মোদী – মাস্ক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মোদী – মাস্কের আলোচনার বিস্তারিত জানা যায়নি।তবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ইলন মাস্কের আলোচনার প্রধান বিষয় বাণিজ্য ও প্রযুক্তি ছিল। ভারত ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে ভারতে ব্যবসা করতে দিতে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতের মত বিশাল দেশে , যেখানে বহু দুর্গম এলাকা ও দুর্বল কাঠামো রয়েছে সেই সমস্ত এলাকায় স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা যুগান্তকারী হবে। তবে অর্থনৈতিক ভাবে স্টারলিংক সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে কিনা তা বিবেচনার বিষয়।
তবে মোদির সঙ্গে বৈঠকের পরই মাস্কের সংস্থা টেসলা কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ভারতের বাজারে ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বেড়ে চলেছে। নিয়োগের টেসলার বিজ্ঞপ্তি ভারতে টেসলার আগমন ও কিছু কর্ম সংস্থানের ইঙ্গিত বহন করে। প্রসঙ্গতঃ স্টারলিংক ভারত বা যেকোন দেশে চালু হোক , সেই স্টারলিংক নতুন কর্ম সেই দেশে খুব বেশি কর্ম লোকবল দরকার হয় না। কারণ স্টারলিংক স্টালাইট নির্ভর। স্টার্লিংকের নিয়ন্ত্রণ ও মেরামতি আমিরিকা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। স্টারলিংক কোন অবকাঠামো ও কর্মসংস্থান তৈরী না করেই বিপুল পরিমানে স্টারলিংক বিক্রির টাকা বাইরে নিতে সক্ষম।

স্টারলিংক কি ?
স্টারলিংক হলো স্পেসএক্সের একটি প্রকল্প, যা পৃথিবী থেকে উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়। স্টারলিংক ২০১৫ সালে শুরু হয় এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ১০০ দেশে সেবা প্রদান করছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬,৯৯৪টি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন হয়েছে। যেখানে সাবমেরিন কেবল বা অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন ব্যায়বহুল বা সম্ভব নয় সেই সমস্ত এলাকায় স্টারলিংক ইন্টারনেট যোগাযোগের জন্য গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৩ ফেব্রুয়ারি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্ককে পাঠানো আনুষ্ঠানিক চিঠিতে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবার উপযোগিতা তুলে ধরেন। তিনি ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর প্রস্তাব দেন।বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত-পাকিস্তান একটি মনস্তাত্বিক যুদ্ধের অংশ। এই মনস্তাত্তিক যুদ্ধে পাকিস্তান ধর্মীয় জিকিরে সামনের দিকে এগিয়ে থাকে। ভারত কিংবা পাকিস্তানের রাষ্ট্র প্রধান কিছু একটা করলো। সেই কাজটি সেই দিন বা কাছাকাছি দিনে করে ফেলা খুব বেশি সাবালকতার পরিচয় বাহক না। ইউনুস মাস্কের দেখা না পেয়ে ফোনালাপ অনেকটা ‘ দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ‘ !

স্টারলিংক ইন্টারনেট শাটডাউন থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করবে না, বরং এটি সরকারের এবং প্রাইভেট কোম্পানির যৌথ ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে। বাংলাদেশে যে ইন্টারনেট শাটডাউন হয়, তা সরকারের নির্দেশের মাধ্যমে করা হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করতে ইন্টারনেট সেবাদানকরি কোম্পানির সহযোগিতা দরকার হয়। যে কোন ব্যাবসা প্রতিষ্টানকে সরকারি চাপ উপেক্ষা করার পথ নেই। ইন্টারনেট বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে একটি সুইচ আছে যা টিপলেই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়, বিষয়টি এমন নয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যেমন এনটিএমসি এবং বিটিআরসি, আইএসপি ও মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইন্টারনেট বন্ধ করার নির্দেশ পাঠায়। সরকার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। সাধারণ গ্রাহকদের কখনোই পুরো পরিস্থিতির কারণ জানানো হয় না। যেমন, জুলাই মাসের আন্দোলনের সময়, টেলিনর এশিয়া সরকারের নির্দেশের কথা জানালেও গ্রামীণফোন তখনো সেটি জানায়নি।

স্টারলিংক বাংলাদেশে বৈধ ভাবে অপারেট করতে গেলে সরকারী নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। স্টারলিংকও সরকারী সিদ্ধান্তে বাধ্য থাকবে। সুতরাং, স্টারলিংক চালু হওয়ার পর ইন্টারনেট শাটডাউন বন্ধ হয়ে যাবে না। এই ধরণের আলোচনা বা দাবি হাস্যকর। ২০২৩ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইলন মাস্ক রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে (যেমন ক্রিমিয়া) স্টারলিংকের সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কারন রাশিয়া স্টারলিংককে তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলেস্টারলিংক ব্যবহার করতে দেওয়ার পক্ষে ছিল না। বিদেশি কোনো প্রাইভেট কোম্পানি কখনও দেশের সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে পারবে না।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইন্টারনেট কিভাবে চলে তা জানার কথা। তার বক্তব্যটি সঠিক না। ইন্টারনেট শাটডাউন বন্ধ হবে কিনা, তা রাষ্ট্রীয় নীতি এবং রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। স্টারলিংক বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে এবং এই সেবা ব্যবহারের জন্য প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। এর ফলে কিছু মানুষ হয়তো খুশি, কিন্তু ইকোনোমি এবং জাতীয় স্বার্থে আরও গভীরভাবে চিন্তা করা।
স্টার্লিংকের প্রাথমিক সেটআপ সবমিলিয়ে ৮/৯ শত ডলার পরে যাবে। যা বর্তমানের সেটআপ ও ব্যাবহারের খরচের চেয়ে বেশ কয়েক গুন্ বেশি।
ডলার সংকটের কালে প্রতি মাসেই বিপুল অংকের ডলার দেশের বাইরে যাবে। শুধু কি ইন্টারনেট যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য কি স্টার্লিংকে ‘ আমন্ত্রণ ‘ না এর পিছনে ট্রাম্প প্রশাসনের সুনজরে থাকার কসরৎ চলছে। স্টারলিংককে অনুমতি দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার আমলে প্রস্তাবনা তৈরী হয়েছিল। ইউনুস সরকারের প্রস্তাবনার সাথে হাসিনার প্রস্তাবনার পার্থক্য কোথায়। বাংলাদেশের ডাটা কিভাবে কোথায় সংরক্ষিত হবে তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!