বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি

সমসমাজ ডেস্ক
রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫

২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বিপ্লবী ছাত্র–জনতার গণজমায়েত’ আয়োজন করে। এই জমায়েতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার এবং রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল, ‘‘জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুনভাবে রিপাবলিক ঘোষণা এবং এর ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করা’’। এসময় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিকে অনেকেই ইউনুস ক্যাবিনেটের অভ্যন্তরীণ সংকট হিসেবে দেখেছিল। বিএনপি রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিরোধিতা করেছিল, এবং রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছিল যে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে সেনাপ্রধানের অপসারণের দাবি উঠতে পারে। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করলেও সরাসরি কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণাটি বেশ কিছু সময়ের জন্য সামনে আসেনি। তবে, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে এ বিষয়ে কথা বলেছেন, এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান সংবিধান বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল, এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিও তাদের সমর্থন জানায়। ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাংলামোটরে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে’’। সেদিন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, ‘‘সেকেন্ড রিপাবলিক (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) আইনগত বিষয়, আমরা এখন এটি নিয়ে আলোচনা করছি না’’।
ঘোষণাপত্র প্রকাশের বিষয়ে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আপত্তির মুখে, ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলম জানান, ‘‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে’’। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সরকার কোনো ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করায়, ১৬ জানুয়ারি, ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সংলাপ শেষে, পরবর্তী কর্মপন্থা হিসেবে মতামত নিতে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের চিঠি দেওয়া হয়। অভিমত পর্যালোচনা করে একটি সংশোধিত ও সর্বজনগ্রাহ্য ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এবং জনগণের উপস্থিতিতে তা দ্রুত ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
এভাবে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও এর কোনো স্পষ্ট রূপরেখা এখনও তৈরি হয়নি, তবুও এর বাস্তবায়ন বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গঠন হতে এখনো সময় বাকি রয়েছে।
‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এখনও নেই। তবে, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে জানান, ‘‘আমরা সংবিধান বাতিল চেয়েছিলাম, কিন্তু এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। তবে, সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হলে এর ওপর ভিত্তি করে সংবিধানের বড় পরিবর্তন করা সম্ভব’’।
এখন, যখন জাতীয় নাগরিক পার্টি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার কথা বলছে, তখন তা অনেকেই একটি অগণতান্ত্রিক সরকার দ্বারা সংবিধান পরিবর্তনকে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। এর মাধ্যমে তারা ক্ষমতার পরিবর্তন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই কাজ করতে চাইছে। সেকেন্ড রিপাবলিক কিংবা গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার একটি বার্তা ।


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!