সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘শিক্ষার্থীবৃন্দ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকা হয়। এছাড়া, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিচার এবং ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসির দাবিতে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে চবির মেয়েরা’ ব্যানারে মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। পৃথকভাবে মিছিল শুরু হলেও উভয় ব্যানারের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে জিরো পয়েন্টে সমাবেশ করেন। সেখানেই এই ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (১০ মার্চ) রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে আয়োজিত সমাবেশ চলাকালে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদারের বক্তব্য দেওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন, যার ফলে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষ না করেই চলে যান।
সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখছিলেন। সুমাইয়া যখন চবি প্রক্টরের “হানি ট্র্যাপ” নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছিলেন, তখনই একটি গোষ্ঠী এক পাশ থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে চিৎকার শুরু করে। এতে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং সুমাইয়ার হাত থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। ‘হানি ট্র্যাপ’ প্রসঙ্গটি রাজনৈতিক বলে উল্লেখ করে তা প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়। সুমাইয়া শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেসবুকে ছাত্রীদের ‘হানি ট্র্যাপার’ বলে মন্তব্য করেন, যা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অবমাননাকর মনে করি। এই বিষয়ে আমি বক্তব্য দিচ্ছিলাম, কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্লোগান দিয়ে আমাকে থামিয়ে দেয়।’’
প্রেক্ষাপট ও বিতর্কিত বহিষ্কারাদেশ
উল্লেখ্য, ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। ছাত্রীদের অভিযোগ, ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী হলে প্রবেশ করে আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ঘটনাটি হলে থাকা আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানো হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। বরং পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদকারী ছাত্রীদের বহিষ্কার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন। অন্য ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশট থেকে জানা যায়, ছাত্রীদের বহিষ্কার করতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ‘অনুগত’ ছাত্রদের ব্যবহার করেছেন দুই সহকারী প্রক্টর। মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় বহিষ্কারের জন্য উসকানি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্ক্রিনশটগুলোতে সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নুরুল হামিদের ‘অনুগত’ ছাত্রদের সঙ্গে কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।