“খোলা জানালা”- পানির অর্ধেক গ্লাসকে কেউ কেউ অর্ধশূণ্য দেখে। কিন্ত সেই দেখাটা কেবলমাত্র চোখের ফাঁকি। অর্ধেক পূর্ণ গ্লাস মূলত পুরোটাই ভরা। তবে হ্যা, যেটা আমরা দেখতে পাই না, সেটা হলো গ্লাসের বাকি অংশ বাতাসে ভরা। যা অদৃশ্য। সেই অদৃশ্য অংশেই আমাদের বোঝাপোড়ার সমস্যা।
লিখতে চেয়েছিলাম বর্তমান রাজনীতি এবং আমাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ড নিয়ে। যে ভূখণ্ড এখন বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ডের যৌক্তিক ও হিসেবের ভূখণ্ড বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে সেখান থেকে হৃদয়ের কথা শুনে কিছুটা সরে এলাম কেননা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র যদি একটি নির্দিষ্ট বা মৌলিক অবস্থানেই না আসতে পারে তবে কে রুখিবে বা বুঝিবে ভূখণ্ডের মূল্য?
বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রটি বাস্তবিক অর্থেই অস্থিরতার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিনিয়তই চলছে নানান ঝামেলা। যা রাষ্ট্রটিকে কোন না কোনভাবে নিমজ্জিত করেই চলছে। কি আশায় বাঁধিলাম ঘর? সেই ঘরের ভিতরেই মর। এ যেন ডেকে আনা অভিশাপ। এত রক্তের বিনিময়ে অভ্যুত্থান অতঃপর সব শূন্যের ঝুলি। যে লড়াই দিয়ে রাষ্ট্র মেরামতের কথা হলো, সেই লড়াইটা যেন নতুন অধ্যায়েই আবার শুরু। চলছে নানান কর্ম। হত্যা, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই এবং সর্বোচ্চ ধিক্কারের ধর্ষণ। সর্বত্রই চলছে মবের রাজত্ব। জোর যার মুল্লুক তার, কেউ কোথাও নেই। এই যেন এক হীরক রাজার দেশে আমাদের বসবাস। হাতি- ঘোড়া- সৈন্য- সামান্ত সব আছে তবে নেই কোন প্রতিকার। উল্টো দেশ জুড়েই চলছে ধর্ষণের কারিকুলাম।
সেই ধর্ষণের কারিকুলামে নতুন সংযোজন “শাহবাগ- শাপলা”। কেমন জানি মনে হচ্ছে, “ধর্ষক আর ধর্ষণের বিচার শাহবাগ আর শাপলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এমন একটি অনাকাঙ্খিত বিষয় নিয়েই লিখতে হচ্ছে কেননা যেটার সমাধান হবার কথা ছিল রাষ্ট্র থেকে, সেটাই হয়তো গভীরতা অনুভব না হওয়াতেই আমরাই টেনে এনেছি শাহবাগ আর শাপলায়। ভাবতেই হীম হতে হয়। একটু ইতিহাসে তাকাই। কি দেখতে পাই? অত্র অঞ্চলের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অত্র অঞ্চলে যত বড় আন্দোলন বলুন বা বিপ্লব বলুন, সবগুলোই স্বার্থকতা পেয়েছে তখনই, যখন নারীরা জড়িত হয়েছে এবং সাথে শ্রমিক গোষ্ঠী। একটিও ইতিহাস নেই যেখানে তাদের বিনা সফলতা এসেছে। ব্রিটিশ ভারতের লড়াইয়ে বিনা প্রীতিলতা হতো কি? স্মরণ করুন সেই গানটির কথা, “না জাগিলে সব ভারত-ললনা, এ ভারত আর জাগে না জাগে না। অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনি, হও বীরজায়া, বীর প্রসবিনী। গানটির মাঝে কি দেখি? বিনা নারীতে ব্রিটিশ আন্দোলন সফল হতো কি?
২৪ এ আমাদের আন্দোলন ঘেঁটে কি পাই? হাজারে হাজারে মেয়েরা দিনের আলোর অপেক্ষা না করে রাতের অন্ধকারেই নেমেছিল রাজপথে। ভাবুনতো, তেমনটা না হলে এভাবে আন্দোলনে এত দূরতার সাথে সফলতার মুখ দেখতো কি? দ্বিমত করার সুযোগ আছে কি? আরও পিছনে ফিরে তাকান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। নারীরা কি অবদান রেখেছিল? এই সেই নারীরা যারা শাহবাগে দাঁড়িয়েছে বলেই না যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটার একাংশ হতে পেরেছিল। স্মরণ হয় কি সেই সময়ের কথা? কত নারীর সমাগম ছিল এই শাহবাগে? আমি এখানে শুধুমাত্র নারীদের কথা তুলে আনছি কারণ আমরা আসলে শারীরিক শক্তিমত্তার শক্তি বুঝি তবে নারীদের সমাগমের “নৈতিকতার শক্তিটি” মূলত কম অনুভব করি বলেই অথচ সেই শাহবাগেই ধর্ষক আর ধর্ষণের বাহাস টেনে এনে পথি মধ্যেই ধর্ষণের বিচারের পথ হারাচ্ছি কিনা, হু নোওজ? লেখার শুরুতেই অর্ধেক পানি ভর্তি গ্লাসকে উদহারণস্বরুপ টেনেছি। জানি না বাকি অর্ধেকও যে ভরা সেটা সত্যিই আমরা বুঝি কিনা?
আমার ধারণা কলমের একটি বাজে বদ অভ্যাস আছে। যা একবার মাথায় ঘুরপাক খায় তা কলম যেভাবেই হোক বা যেখানেই হোক উল্টি (বমি) করে দেয়। কি আর করার? তাই সামান্য একটু বাংলাদেশ ভূখণ্ড ও গ্লোবাল বিশ্বের ভৌগলিক শক্তির কিছুটা উল্লেখ করছি। না, বিস্তারিত কিছু নয় তবে কিছু জিজ্ঞেসায়।
খবরে দেখলাম জাতিসংঘে মহাসচিব শুক্রবার রোজা রেখে অবশেষে এক লাখ রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন। রোজা যে কেউ রাখতেই পারে। ওটার জন্য নিয়তের প্রয়োজনও তেমনটা নেই বলেই মনে করি কেননা কবুল করার মালিক উপরওয়ালা। তবে ভাবুনতো কেন রোহিঙ্গাদের সাথেই ইফতার? নিশ্চয়ই মানবতা হবে? তাই না? ঠিক সমস্যাটি সেখানেই। সেই মানবতায়? আমি জাতিসংঘকে জাতিসংঘ খুব কম লিখি। আমার আপন সংজ্ঞায়নে জাতিসংঘ একটি কিছু রাষ্ট্রের সংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ। তাই ওটাকে আমি রাষ্ট্রসংঘ বলতেই বেশি পছন্দ করি।
আমরা সব কিছুতেই গভীরতায় খুব বেশি পৌঁছানোর চেষ্টা করি না। এমনকি আমাদের গণতান্ত্রিক(!) রাষ্ট্রটি কখনোই এবং কোন আমলেই জনগণকে অবগতি করে না, আসল বিষয়। ওটা রাষ্ট্রের দোষ নয়। ওটা একপ্রকার পরাশক্তির কারসাজি। আমরা যতই বলি না কেন, মূলত আমরা রাষ্ট্র হিসেবে নির্ভরশীল বড় বড় রাষ্ট্র শক্তির নিকট। আমাদের কথা বাদ রেখেই ভাবুন, অন্যান্য বড় বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও একে অপরের উপর নির্ভরশীল কিন্ত। আমরা মূলত সেই সব পরাশক্তির কারসাজির মূলত কিছুই জানি না। আরও সহজ ও বাস্তবিকভাবে বলি, জানার অধিকারটাই মূলত ওরা রাখে না।
একটি পড়া বইয়ের কথা বলি। জার্মানির একজন unknown সাংবাদিকের একটি বই পড়েছিলাম। বইটির নামটাই ছিল জার্মান ভাষায় “unbekannt” মানে hidden পরবর্তীতে জেনেছি সেই সাংবাদিক একজন প্রখ্যাত জার্মানি সাংবাদিক ছিলেন। যে সাংবাদিক তার ডিএনতেও সাংবাদিকতার রক্ত ছিল। যা হোক সেই সাংবাদিক বইটিতে তার নামটি লুকায়ীত (hidden) রেখেছিলেন কারণ বহুবিধ। তবে বইটির ভূমিকাতেই উল্লেখ ছিল যদি ১০ % ও মেনে নেন সেটা নিয়ে স্বাভাবিক ঘুম হারাম হবার।
আমরা বাস্তবিক অর্থেই জানি কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পিছনে তিনটি ব্যাংকের বড় ভূমিকা ছিল? যে আফগানিস্তানে বড় বা মজবুত কোন ঘর- বাড়ির ছিল না, সেই আফগানিস্তানে কেন সেই আশির দশক থেকে রাশিয়া চেপে বসলো অতঃপর মার্কিনিরা? অবশেষে মার্কিনিরা ফিরেও গেলো, কেন? আমরা বুঝি কি কেন গলফ্ যুদ্ধ বাঁধিয়েছিল এবং কেন? আমরা বুঝি কি যে সাদ্দাম হোসেন ছিলেন মার্কিনিদের গড়া অথচ সেই সাদ্দামকেই আন্তর্জাতিক শ্যোরুমেই কেন ফাঁসিতে ঝুলানো হয়? আমরা জানি কি কেন এবং কোন কারণে আফগানিস্তানের উপর দিয়ে চার হাজার কিলোমিটার পাইপ লাইন তৈরি হয়েছিল? আমরা জানি কি ইরাক যুদ্ধে কত বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল? আমরা জানি কি ইরাকের মাটির নিচে পৃথিবীর ৬৪% অপরিশোধীত তেল এখন কেন নাই? তেলতো পকেটে করে নেবার জিনিস নৎ? আমরা জানি কি লিবিয়ায় গাদ্দাফির আমলে একজন তরুণ- তরুণী বিবাহবদ্ধ হলে স্টেট কি উপহার দিত? আমরা জানি কি গাদ্দাফির সময়কালে মরুভূমির মাটিতে পৃথিবীর সবচাইতে বড় প্রকল্প দ্বারা বিশুদ্ধ জল লিবিয়ানদের খাবারের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল? আমরা জানি কি গাদ্দাফির সময়ে এক টাকায় বিদ্যুত লিবিয়ানদের ছিল? বর্তমানে লিবিয়া চেয়ে দেখুন কোথায় সেই সব দিনগুলো? এবং ভাবুন কেন? এভাবে শত শত প্রশ্ন বা জিজ্ঞেসা রাখা যাবে। তবে ওগুলো কেবলমাত্র জিজ্ঞেসাতেই বন্দি যে। আমি শুধুমাত্র একটু ভাববার জন্য উল্লেখ করলাম।
কেন আমি জিজ্ঞেসাগুলো তুলে আনলাম? আরব সাগর (Arabian Sea) বা সিন্ধু সাগর যা ভারত মহাসাগরের অংশবিশেষ, যার পশ্চিমে রয়েছে আরব উপদ্বীপ এবং পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশ। আমরা নিশ্চয়ই এতটুকু জানি এই সাগরে যুদ্ধের ডামাডোল বাজছেই। তো এই যুদ্ধের ডামাডোলে ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ থাকবে না, এটাও কি সম্ভব? আগ বাড়িয়ে আজকের লেখায় আর এগুচ্ছি না। জিজ্ঞেসাতেই সীমিত থাকলাম। লেখার শেষে এসে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সেই বিখ্যাত ডায়লগটি স্বরণে এলো, “বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে/ শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না”, স্মরণে আছে নিশ্চয়ই অনেকের। এখানে শেখ হাসিনা মূখ্য নয়, ডয়লগটি তুলে আনা মাত্র। শেখ হাসিনার প্রশংসা করতে আসিনি আমি কেননা শেখ হাসিনাকে ধরে দিয়েছে যে। শেখ হাসিনা এখন উহ্য বিষয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ডায়লগটা স্মরণ হলো তাই নিলাম তবে ডায়লগটা একটু আন্তর্জাতিক করে বলি, ” বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে/ মার্কিনিরা ধরলে ছাড়ে না”।
জানি না কতটা গভীরতার সাথে ভেবেছেন আপনারা? তবে ভাববার মতন একটি সিরিয়াস সাক্ষাৎকার দেখেছি আমি, আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান প্রফেসর ইউনূস সাহেবের গার্ডিয়ান পত্রিকায়। কি ছিল সেই সাক্ষাৎকারে যা আমাকে ভাবিত করেছে? আমাদের প্রফেসর ইউনূস সাহেব সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ট্রাম্প একজন ডিলার/ আসুক আমাদের সাথে ডিল করুক”- সত্যিই চমৎকার তবে কেউ কি একটু গভীরতার সাথে ভেবেছেন, কি ডিল? কোন ডিল? আমি অবাক হয়েছি আবার অবাক হইওনি, আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো সাক্ষাৎকারটি স্রেফ উল্লেখ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। অবাক হয়েছি কারণ বিষয়টি আমরা সত্যিই অনুধাবন করতে সক্ষম হলাম না? নাকি, ওই যে উপরে লিখেছি আমরা নির্ভরশীল এবং রাষ্ট্র আমাদের জানতে দেয় না এবং অধিকার নেই। তাই হয়তোবা পত্রিকাগুলোর’ও অধিকার নেই।
ছোট্ট করে শেষে বলি, আজকের দিনে জো বাইডেন থাকলে এত দিনে আমরা টের পেতাম কত ধানে কত চাল? বিস্তারিত ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না। তবে স্মরণে রাখবেন, সব নদী সাগরেই মিশে এবং মার্কিনিরা ছাড়ে না। হোক সেটা জো বাইডেন বা ট্রাম্প বা ভিন্ন কেউ। আরও স্মরণে রাখুন,”মাক্কা যাবার বহু পথ”। সেই পথটাই কি আমরা দেখিয়ে দিলাম কিনা ডিল নামে? আগামীর অপেক্ষামান থাকুন।
বুলবুল তালুকদার
সমসমাজ সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য
অষ্ট্রিয়া- লিঞ্জ