বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

সিপিবি কার্যালয় দখলের ডাকের রাজনীতি

সমসমাজ ডেস্ক
রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

প্রবাসী লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে মব তৈরি করে সিপিবি কার্যালয়ে হামলার আহ্বান জানান। শুক্রবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সিপিবির নেতাকর্মীরা জড়ো হন এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপস্থিতি ও স্লোগানে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল। এসময় সেনাবাহিনীর একটি টহল দলকেও দেখা যায়।

এর আগে শুক্রবার হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আটটি বামপন্থি সংগঠন। এর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে সিপিবি কার্যালয়কে ‘ছাত্র-জনতার কার্যালয়’ বানানোর ডাক দেন পিনাকী ভট্টাচার্য। এই আহ্বান থেকেই শনিবারের উত্তেজনার সূচনা ঘটে। পিনাকী তার পোস্টে বামপন্থীদের ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করে নতুন শত্রু-বর্গ নির্মাণের চেষ্টা করছেন, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করা হচ্ছে। পল্টনে সিপিবি অফিস দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার নিজেদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে সরকার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দিতে চায়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ঘটনাকে বিজয় হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে তা সরকারের ইচ্ছাতেই হয়েছে। উগ্রপন্থীদের এই উদ্যোগ সফল না হলেও ভবিষ্যতে ছোট-বড় এ ধরনের আক্রমণ অব্যাহত থাকতে পারে। পিনাকী ভট্টাচার্যের এই প্রচেষ্টা পুরোপুরি অসফল হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ, পিনাকীর মব সৃষ্টির হুমকিতে বামপন্থীদের ঘোষিত কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে।

সিপিবি কার্যালয় দখলের ঘটনার সঙ্গে সিপিবি ‘জুলাই অ্যাডিকশন’ থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি নির্ভর করে না। বরং হামলা সফল না হওয়ার ফলে সিপিবি ও বামপন্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে, যাতে তারা বলতে পারে যে, “এই সরকার পুরোপুরি উগ্র ইসলামিস্টদের সরকার নয়।” ফলে, সরকার উগ্র ইসলামিস্টদের অপকর্মের পাহারাদার এবং দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়—এ ধরনের শক্ত বক্তব্য থেকে বামপন্থীরা বিরত থাকতে বাধ্য হবে। ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, গোয়েন্দা সংস্থার অনুরোধে বাম সংগঠনগুলো কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে পরিস্থিতি থেকে নিজেদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। আগামীতে ‘বাম প্রগতিশীলরাও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে’—এই তত্ত্ব প্রচার করেই তারা নিজেদের টিকে থাকার চেষ্টা চালাবে।

 


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!