বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

ছাত্রনেতা দিলীপ রায়ের ওপর পুলিশের আক্রোশ

সমসমাজ ডেস্ক
মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের ব্যাপক আন্দোলন, পুলিশের হামলায় আহত ছাত্রনেতার মুক্তির দাবি

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বেতন-বোনাস পরিশোধ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ এবং কাজের পরিবেশ উন্নতকরণের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ আশুলিয়া ও গাজীপুরে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছেন। বিজিএমইএ ভবন অবরোধ থেকে শুরু করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া পর্যন্ত নানা কর্মসূচিতে অংশ নেন হাজার হাজার শ্রমিক। এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মাঝেমধ্যে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষও হয়েছে। মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ শ্রম মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে বাধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই সময় শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায় পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ দিলীপ রায়কে কলার ধরে টেনে হেনস্থা করে এবং অমানবিকভাবে হাতকড়া পরিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। উল্লেখ্য, এর আগেও দিলীপ রায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় কারাবরণ করেছিলেন।

শ্রমিক নেতারা জানান, প্রতিবছর ঈদের আগে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে নানা অজুহাত তুললেও তারা ঠিকই বিলাসবহুল বিদেশ ভ্রমণে যান। শ্রমিকদের মাসের পর মাস বেতন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়ানোর বদলে বরং ১৪৪ ধারার মতো অমানবিক বিধিনিষেধ আরোপ করে। তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচিত, ফ্যাসিবাদী বা তত্ত্বাবধায়ক—সব ধরনের সরকারই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে উদাসীন এবং নির্মম আচরণ করে আসছে।

আন্দোলনরত নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন তোলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরও কেন শ্রমিকদের রাস্তার আন্দোলনে নামতে হচ্ছে? তারা আরও বলেন, যারা ইসলামের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্তদের জেল থেকে বের করে কোরআন উপহার দেন, ইসলামী খেলাফতের দাবিতে মাজারে হামলা করেন বা নারী ফুটবল বন্ধ করতে আন্দোলন করেন—তারা কেন শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নামেন না? তারা আরো বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলে যারা পাঁচতারকা হোটেলে বসে বড় বড় ইফতার আয়োজন করেন, তারা কি জানেন না চা শ্রমিকরা দুই মাসের রেশন পাননি? স্টাইল ক্রাফটসের শ্রমিক রাম সিং জনি আন্দোলনে প্রাণ হারালেও তথাকথিত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব এই বিষয়ে নীরব থাকে।

বামপন্থী সংগঠনগুলো আন্দোলনে তাদের আপোষহীন অবস্থান ঘোষণা করেছে। তারা অবিলম্বে ছাত্রনেতা দিলীপ রায়কে নিঃশর্ত মুক্তি, হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার এবং ঈদের আগেই সকল গার্মেন্টস শ্রমিকের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধের জোর দাবি জানিয়েছে। তারা বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কারণ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া প্রকৃত সামাজিক ন্যায়বিচার সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি জামাতের চার দলীয় জোট সরকার, ওয়ান ইলেভানের জরুরী সরকার, লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার, লীগ সরকার তারপর ৫ আগস্টের পর ছাত্র অভ্যুত্থানের শান্তিতে নোবেল পাওয়া ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের মধ্যে কোন ফারাক নেই। সকল সরকারের কাছে শ্রমিকের কোনো দাম নেই। কারণ এই শ্রমিকরা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পড়া মানুষ না; তারা ইউটিউবারও না। তাদের কেউ সমন্বয়কও না; তাদের কেউ ক্রিকেটারও না। তাদের নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদে ছাপা হবে না, তাদের কেউ ক্রিকেটার হবে না, তাদের উদ্ধারে উপদেষ্টারা দোয়া করবেন না।

 


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!