বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৭ অপরাহ্ন

আসছে আইএমএফ , বাড়ছে বিদ্যুতের দাম !

সমসমাজ ডেস্ক
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বাংলাদেশ ২৩৯ কোটি ডলার কিস্তির অর্থ পেতে পারে বাংলাদেশ। অর্থছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করতে আইএমএফের প্রতিনিধি দল চলতি এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসার কথা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। আইএমএফের একটি দল আগামী ৫ এপ্রিল ঢাকায় আসছে। দলটি ৬ এপ্রিল থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ সফরে আইএমএফের দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে সফররত আইএমএফের দল। দলটি প্রথম দিন ৬ এপ্রিল এবং শেষ দিন ১৭ এপ্রিল বৈঠক করবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে কিস্তি পেতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যে বাধার মুখে পড়েছে, তা অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেজন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, ভর্তুকি হ্রাস ও মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার মতো কিছু অজনপ্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ও আইএমএফ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনমনীয় থাকলে পরবর্তী কিস্তি নাও পাওয়া যেতে পারে। এর ফলে অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএমএফের দুই কিস্তি একসঙ্গে পেতে বাংলাদেশকে তিনটি বড় শর্ত পূরণ করতে হবে। এগুলো হলো, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়, এবং রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে পৃথক করা।

বাংলাদেশ সরকার আইএমএফকে জানিয়েছে এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব প্রশাসন আলাদা করার সিদ্ধান্ত ছাড়া বাকি দুই শর্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এক প্রাক্-বাজেট আলোচনায় বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে এখনই বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের হাতে ছাড়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো সংকট তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারিত হচ্ছে, যার ফলে ডলারের দাম ১২২ টাকায় মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই ঋণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। বাকি রয়েছে ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সরকার চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি আগামী জুন মাসে একসঙ্গে পাওয়ার আশা করছে।

এদিকে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল আগামী ৫ এপ্রিল ঢাকায় আসছে। দলটি ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। সফরের শুরু ও শেষ দিন আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, আইএমএফের প্রধান শর্তগুলো না মানলে ঋণের পরবর্তী কিস্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় সন্তোষজনক হওয়ায় মুদ্রা বিনিময় হার বাজারে ছেড়ে দেওয়ার এটাই সঠিক সময় বলে তিনি মনে করেন।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এখনো পূরণ হয়নি। অতিরিক্ত অন্তত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে। তবে রাজস্ব প্রশাসন ও নীতি আলাদা হওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কর অব্যাহতি কমানো নিয়েও বিতর্ক আছে। ব্যবসায়ীরা এর বিরোধী, যা সরকারের বিবেচনায় রাখতে হবে।

এছাড়া আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর অংশ হিসেবে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বললে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ অবস্থায় উভয় পক্ষকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও ঋণ কর্মসূচি বজায় রাখা জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!