বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ন

যুবকদের যুদ্ধযাত্রা : সিরাজগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ- পর্ব ৩- সাইফুল ইসলাম

সাইফুল ইসলাম
রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

২৫ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ মহুকুমার মাঝে দিয়ে যাওয়া নগরবাড়ি-বগুড়া সড়ক এবং ২৭ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ শহর দখলে নেয় পাকসেনারা। খুব দ্রæতই পাকসেনারা পৌঁছে যায় বিভিন্ন থানায়। তখন মহুকুমা ও থানা এলাকা ছেড়ে গ্রামে গিয়ে আত্মগোপন করে আন্দোলনকারী তরুণেরা। তারা এ সময় দলবদ্ধ ভাবে চলাফেরা করতে পারতো না, চলাফেরা করতো ছোট ছোট গ্ৰুপে বিভক্ত হয়ে। অপরদিকে, অসহযোগ আন্দোলনের শুরু থেকেই দেশের ভিতরে একটি কথা ছড়িয়ে পড়ে যে, ভারত মুক্তিযুদ্ধকে সহায়তা দিচ্ছে, ফলে তরুণদের প্রধান ঝোঁক ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং অস্ত্র সংগ্রহ করে দেশে ফিরে এসে অংশ নেওয়া মুক্তিযুদ্ধে। সিরাজগঞ্জ থেকে বের হওয়া ছাত্রনেতাদের একাংশ আশ্রয় নেয় রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা ও চিলগাছা গ্রামে। চিলগাছায় ফসলী ক্ষেতে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। তার আগে যার যার পরিবারের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে সপ্তাহ পরে এক স্থানে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সপ্তাহ খানেক পরে তারা বিভিন্ন গ্ৰুপে বিভক্ত হয়ে রওনা হয় ভারতে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ভর্তি হয়, আবার কেউ কেউ পথ খুঁজে না পেয়ে আশ্রয় নেয় দেশের ভিতরেই।

ইতিমধ্যেই গ্রামে গ্রামে জোতদার কৃষক এবং শহর থেকে গ্রামে আশ্রয় নেওয়া বড় ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে ডাকাতি সংঘটিত হতে শুরু করে। পাশাপাশি প্রশাসন, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী এবং অন্যান্য বাহিনী সংঘটিত করতে শুরু করে পাকসেনারা। ভিতরে অবস্থানরত তরুণেরা বিভিন্ন ভাবে চাপে পড়ে যায় তখন। নিজেদের নিরাপত্ত¡া এবং এলাকাবাসীকে রক্ষার প্রয়োজনে সশস্ত্র হতে বাধ্য হতে থাকে তারা। মে-জুনে সিরাজগঞ্জ মহুকুমায় স্পষ্টত তিনটি গ্ৰুপ সশস্ত্র হয়ে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়তে দেখা যায়। প্রথম গ্ৰুপটি সংগঠিত হয় তৎকালীন সিরাজগঞ্জ কলেজের ভিপি সোহরাব আলী সরকারের নেতৃত্বে। তারা পাঁচ জন যথাক্রমে সোহরার আলী সরকার, মনিরুল কবীর, লুৎফর রহমান মাখন, আব্দুল আজিজ সরকার ও শফিকুল ইসলাম শফি ভারত যেতে না পেরে কামারখন্দ থানার জঙ্গলাকীর্ণ গ্রাম ভদ্রঘাটের জাঙ্গালিয়াগাঁতীতে আশ্রয় নেয়। ডাকাত, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনীর থেকে আত্মরক্ষার্থে সশস্ত্র হওয়ার কোনও বিকল্প থাকে না তাদের। দুটি থ্রিনটথ্রি, একটি চাইনিজ রাইফেল, একটি টুটু বোর রাইফেল এবং কয়েকটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে মে মাসের শেষের দিকে যাত্রা শুরু করে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। তাদের কমান্ডার ইন চিপ (সিএনসি) হন ভিপি সোহরার আলী সরকার। এ গ্রæপের সঙ্গে যুক্ত হন গাইবান্ধা থেকে আগত বেঙ্গল রেজিমেন্ট সদস্য লুৎফর রহমান অরুণ। ধীরে ধীরে পলাশডাঙ্গার সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে; যারা পলাশডাঙ্গায় যুক্ত হতে আসছিল তারাই অস্ত্র সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে থাকে। একইভাবে উল্লাপাড়া থানার কয়ড়া এলাকায় সংগঠিত হচ্ছিলেন খোরশেদ আলী, ইপিআর সদস্য আব্দুস সামাদ, শামসুল আলম সহ কয়েকজন। অপরদিকে, সিরাজগঞ্জে পাশ্ববর্তী স্পিনিং মিল এলাকায় ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একটি বাহিনী। এ বাহিনীটি মূলত ভাষানী ন্যাপের পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি সমর্থিত বলে জানা যায়। এমন আরো কিছু ছোট ছোট গ্রæপ সংগঠিত হচ্ছিল সিরাজগঞ্জ মহুকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে।
অপরদিকে, আব্দুল লতিফ মির্জাসহ বেশ কিছু তরুণ পশ্চিম দিনাজপুরের কামারপাড়া ইয়থ ক্যাম্পে যুক্ত হন। তারমধ্যে ১৬ জনকে নিয়ে তিনি চলে যান পাঙ্গা বিএলএফ ক্যাম্পে। সেখানে সিরাজগঞ্জ থেকে যাওয়া তরুণদের নিয়ে আলোচনায় বসেন বিএলএফের চার প্রধান শেখ ফজুলল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ। বৈঠকে বিএলএফ যুদ্ধ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় নেতারা বলেনÑ বিএলএফ মূলত তরুণ আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংগঠন। নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রয়োজন ছাড়া জনসমক্ষে অস্ত্র প্রদর্শণ এবং ব্যবহার করবে না তারা। তারা একেক জন পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গ্রামে গ্রামে গড়ে তুলবে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক গোষ্ঠী। সেখান থেকে সাহসী তরুণদের নিয়ে গড়ে তুলবে মুক্তিযোদ্ধা দল। এ ভাবে বিএলএফ সদস্যরা গ্রাম, পরে ইউনিয়ন, তার পরে থান ও মহুকুমা কমিটি গড়ে তুলবে। দূর্বল শত্রæর ওপর আঘাত হানতে শুরু করবে তারা। দীর্ঘমেয়াদী এ যুদ্ধের চূড়ান্ত মূহুর্তে সশস্ত্র গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে শত্রæ মুক্ত করা হবে। বিস্তর আলোচনা শেষে প্রাথমিক যোগাযোগের জন্য আব্দুল লতিফ মির্জাকে সিরাজগঞ্জ মহুকুমায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদের পাঠানো হয় প্রশিক্ষণ নিতে দেরাদুনে।

আব্দুল লতিফ মির্জা দেশের ভিতরে এসে কয়েকজন ছাত্রনেতার সঙ্গে যোগযোগ করেন। সিরাজগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক শম আব্দুল ওয়াহাবকে দেন উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও চাটমোহর থানায় সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব। এছাড়া সলপের ইকতিয়ার চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বেলকুচি, কামারখন্দ এলাকার সংগঠন গড়ার দায়িত্ব দেন। এসব তৎপরতা চালাতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে পলাশডাঙ্গার সঙ্গে। তারা আব্দুল লতিফ মির্জাকে অনুরোধ করে পলাশডাঙ্গা পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। তাদের কর্মকাÐে মুগ্ধ হয়ে সহজেই পরিচালকের দায়িত্ব নিতে রাজী হন লতিফ মির্জা। তিনি পলাশডাঙ্গায় যুক্ত হওয়ায় দ্রæতই এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন অঞ্চলে। অনেকেই এমনকি কয়ড়ায় সংগঠিত হওয়া খোরশেদ গ্রæপসহ বিভিন্ন গ্ৰুপও তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। কিন্তু বড় হতে গিয়ে পাকপ্রশাসন থেকে পলাশডাঙ্গার গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। খুব সহজেই চিহ্নিত হয়ে পড়ে ভদ্রঘাটে অবস্থানরত বসাকপাড়ার পলাশডাঙ্গার ঘাঁটি এলাকা। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে পলাশডাঙ্গার ওপর হামলা চালায় পাকসেনা ও রাজাকারেরা। অসম যুদ্ধে বসাকপাড়া, সাহা পাড়াসহ চার গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান ছেড়ে ছত্রভঙ্গ হতে বাধ্য হয়। এসময় চার গ্রামের স্থানীয় ২২ জনসহ অন্তত চল্লিশ জন শহিদ হন। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় তিন শতাধিক। অন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে চলে গেলেও আব্দুল লতিফ মির্জা, সোহরাব আলী সরকার, লুৎফর রহমান অরুণসহ মূলধারা চলে যায় বেলকুচির রান্ধুনিবাড়ি এলাকায়।

তখন বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, পানি থইথই করছে নদীনালা, খালবিলে। মুক্তিযোদ্ধারা হুড়ার সাগরে গিয়ে নৌকা ঠিক করে তাতে উঠে পড়ে. শুরু হয় পলাশডাঙ্গার নৌকায় ভাসমান পর্ব। ধীরে ধীরে তাদের প্রধান যুদ্ধ এলাকা হয়ে ওঠে পানিবহুল এলাকা বিশেষ করে চলনবিল অঞ্চলের উল্লাপাড়া, তাড়াশ, গুরুদাসপুর, চাটমোহর অঞ্চল। এছাড়াও নৌকায় যেখানে যাতায়াত সম্ভব তেমন নদীবহুল এলাকা। যেমন করোতোয়া হয়ে ইছামতী হয়ে ব্রহ্মগাছা পর্যন্ত তারা মাঝে মাঝে চলাচল করেছে। শেষের দিকে তাদের নৌবহরে ৪০ থেকে ৫৫টি নৌকায় অন্তত ৪ থেকে সাড়ে ৫ শ’ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা থাকতো। শেল্টার মাস্টাররা আগে থেকেই কোথায় পলাশডাঙ্গা অবস্থান নেবে তা ঠিক করে রাখতো। রাতে খাবার সেরে পরবর্তী শেল্টারে গিয়ে অবস্থান নিত পলাশডাঙ্গার নৌকা। সকালে উঠে অবস্থানের কাছের কোনও ডাঙ্গায় প্যারেড পিটি অর্থাৎ প্রশিক্ষণ সেরে নিত। তখনই দেখাশোনার সুযোগ ঘটতো জনগণের সঙ্গে। পুরো বাহিনী পরিচালনার জন্য আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে ছিল একটি পরিচালক মন্ডলী । কমন্ডার ইন চিপের দায়িত্ব পালন করেন সোহরাব আলী সরকার। আর ব্যাটেলিয়ান কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে আসা লুৎফর রহমান অরুণ। কোম্পানির দায়িত্ব পালন করতেন বিআর, ইপিআর, পুলিশ আনসার থেকে আসা সদস্যরা, কারণ তারা যুদ্ধে অভিজ্ঞ। কোথাও অপারেশনের সিদ্ধান্ত হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠিয়ে দেওয়া হতো সেখানে। অপারেশন শেষে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানরত নৌকায় ফিরে আসতো মুক্তিযোদ্ধারা। এভাবেই সিরাজগঞ্জের প্রধানতম বাহিনী পলাশডাঙ্গা হয়ে ওঠে একটি ‘ভাসমান সেনানিবাস’।

আগষ্টের মাঝামাঝি সময়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সিরাজগঞ্জ আসে ১২ বিএলএফ সদস্য। তারা আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ৬ জন দক্ষিণাঞ্চল এবং ৬ জন উত্তরাঞ্চলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জন হলেনÑ মোজাফ্ফর হোসেন মোজাম, ইসহাক আলী, লুৎফর রহমান দুদু, আমির হোসেন খান, ফিরোজ ভুঁইয়া ও হাবিবুর রহমান হাবিবুল্লাহ। এদের মধ্যে হাবিবুল্লাহ বিশেষ কাজে ঢাকায় চলে যান, অন্যরা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েন। অপর ৬ জন রাকসুর ভিপি আব্দুস সামাদ (বেড়া), আব্দুল আজিজ মির্জা (বংকিরহাট, বিমল কুমার দাস (কামারখন্দ), আব্দুল বাকী মির্জা (শাহজাদপুর), ইফতেখার মবিন পান্না (সলপ-উল্লাপাড়া) রা উত্তরাঞ্চলে চলে যান। তারা বিভিন্ন ্এলাকায় বিভক্ত হয়ে সংগঠন গড়ে তোলার কথা থাকলেও ‘বিশেষ কারণে’ যুক্ত হন পলাশডাঙ্গায়। অক্টোবরের দিকে এফএফে প্রশিক্ষণ পাওয়া আমজাদ হোসেনসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধাও যুক্ত হন পলাশডাঙ্গায়। এভাবেই ধীরে ধীরে পলাশডাঙ্গা হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী।
অপরদিকে, প্রবাসী সরকার নিয়ন্ত্রিত সিরাজগঞ্জের এফএফ মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজ এলাকায় দেশের ভিতরে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তাদের বিএসএফ অথবা বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে সীমান্ত রক্ষার কাজে লাগানো হয়। পান্না শাহজাহান তারা গ্রæপ ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করছিল। তাদের ১১ নম্বর সেক্টরের জামালপুরের ভিতরে পাঠানো হয়। তারা পাকসেনা কতৃক আক্রান্ত হলে ফিরে যায় সেক্টর হেডকোয়ার্টারে। যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে আসার শাস্তি হিসেবে তাদের অস্ত্রহীন করা হয়। তখন তারা ক্যাম্প থেকে অনুমতি না নিয়ে চলে আসে আসামের মাইনকার চরে অবস্থানরত সিরাজগঞ্জের এমপিএ সৈয়দ হায়দার আলীর কাছে। এমপি সাহেব তখন ৭ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল নুরুজ্জামানের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের ভিতরে পাঠানো ব্যবস্থা করেন তাদের। এই গ্ৰুপটির প্রায় সত্তর জন মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় নেন সিরাজগঞ্জ শহরের পূর্বাঞ্চলে যমুনার চরাঞ্চলে। একই সময়ে কুয়াত-ইল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আরো একটি এফএফ গ্ৰুপ সিরাজগঞ্জের ভিতরে আসার সুযোগ পায়। তারা যুদ্ধ করছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায়। একসময় গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা সীমান্ত যুদ্ধে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করে। তখন তাদেরও পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে। অক্টোবরে বিএলএফের আরো ১২ জন দেশের ভিতরে আসার সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে শেখ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও মোতালেব হোসেন বহুলীসহ রায়গঞ্জের সংগঠন গড়ার জন্য কাজ শুরু করে। আকবরসহ দুইজন চলে যায় তাড়াশে। আব্দুল হাই, আনিসুর রহমান মামুনসহ অন্যরা চলে যান কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, চৌহালী অঞ্চলে। অক্টোবর নভেম্বরে বিএলএফের আরো তিনটি গ্ৰুপ সিরজাগঞ্জ আসে এবং সিরাজগঞ্জ, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
অক্টোবরের শেষ দিকে বেশ কয়েকটি এফএফ মুক্তিযোদ্ধা গ্ৰুপ চলে আসে বেলকুচি অঞ্চলে। তারা তৎপর হয়ে ওঠে বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়ার কিছু এলাকায়। বিভিন্ন থানা অঞ্চলেও চলে আসে বেশ কিছু এফএফ গ্ৰুপ, কারণ তখন সীমন্ত অঞ্চলে যুদ্ধে কমে প্রয়োজন বাড়ছিল ভিতরের যুদ্ধের। তারা ভিতরে এসে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে। অপরদিকে জনগণের সমর্থণতো রয়েছেই। তারা নিরস্ত্র হয়েও বিভিন্ন যুদ্ধে ভীড় করতে থাকে। এতে গ্রামাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে পাকিস্তানপন্থীরা গ্রামাঞ্চল থেকে মহুকুমা শহর বা থানা হেডকোয়ার্টারে এসে ঠা্ইঁ নিতে থাকে। সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জও মুক্তির দিনক্ষণ এগিয়ে আসতে থাকে। এখন অপেক্ষা বিজয়ের চূড়ান্ত লগ্নের।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা। আহ্বায়ক , সিরাজগঞ্জের গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটি।


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!