৫ অগাস্ট পরবর্তী গণমাধ্যম
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাস রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও দলীয় প্রভাবের সঙ্গে জড়িত। মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে সংবাদপত্র বন্ধ করা, বিজ্ঞাপন বন্ধের হুমকি বা সরাসরি সেন্সরশিপ ছিল সাধারণ ঘটনা। হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গ , বিশেষ সংস্থার টেলিফোন , সাংবাদিকদের উপর হামলা -মামলা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। তবে ৫ আগস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও ইউনূস-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন সংকট দেখা দেয়। সংবাদপত্র অফিসে হামলা, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিলের মতো ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন তুলেছে। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পরপরই ঢাকায় অন্তত আটটি টেলিভিশন চ্যানেল ও তিনটি পত্রিকা অফিসে হামলা ও ভাঙচুর হয়। একই সময়ে সারা দেশে বিভিন্ন প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি জাতীয় স্থাপনায়ও হামলা হয়। তবে এই হামলার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি এবং পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। আগস্টের হামলার পর থেকেই শুরু হয়েছে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে পাল্টা দখলের প্রক্রিয়া। অতীতের মত গণমাধ্যমে এখন ন্যূনতম সাংবাদিকতার নীতিও মানা হচ্ছে না। বহু ক্ষেত্রে কেবল সরকারি প্রেস রিলিজ প্রকাশিত হচ্ছে। হামলাকারীদের পরিচয়ও স্পষ্ট করা হয় না। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণেও পরিবর্তন আসে। ফলে সংবাদ পরিবেশনে নতুন কিছু আসে না, বরং পুরোনো সংবাদই নতুন মোড়কে উপস্থাপিত হয়।
ইউনূস সরকারের ভাষ্য
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চায় কোনো বাধা দেওয়া হবে না এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও সমর্থন করা হবে না। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের গণমাধ্যম এখন নজিরবিহীন স্বাধীনতা ভোগ করছে, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ভুল তথ্যের বন্যা। ২৯ জানুয়ারি ২০২৫-এ ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যালেক্স সোরোস ও সভাপতি বিনাইফার নওরোজির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ১৩ মার্চ ২০২৫-এ জানিয়েছেন, গত সাত মাসে সরকার কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করেনি। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় কিছু টেলিভিশন স্টেশন অপতথ্য প্রচার করলেও সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হওয়ায় সেগুলো বন্ধ করেনি। গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ইউনুস সরকার আগের সরকার গুলো মারমূখী নীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। এই পরিবর্তন বাহ্যিক। আগে সংবাদপত্রে বিশেষ সংস্থার লোকেরা অপছন্দের সংবাদ সরিয়ে নিতে ফোন করতো। এখন একই কাজ বেশ যত্ন সহকারে করা হয়। প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভাষায় ‘‘আমরা যদি মনে করেছি যে, আপনি নিউজটি ভুল দিয়েছেন, আমি আপনাকে ভদ্রভাবে জানিয়েছি যে, এই নিউজটি ভুল, অনুগ্রহ করে একটু দেখেন, পুনরায় দেখেন নিউজটি।…আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যাপারে শতভাগ অঙ্গীকারবদ্ধ।” [ ডয়চে ভেলে বাংলা ৭ নভেম্বর ২০২৪]
‘ জিয়াফত ‘ নিয়ন্ত্রণের নতুন কৌশল
রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ কাওরান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ের সামনে ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে গরু জবাই করার কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হচ্ছে। সমাবেশে তারা অভিযোগ করেন— ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের তওবা করানোর জন্য এ জিয়াফতের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে একই ব্যানারে গত বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর প্রথম আলোর সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিক্ষোভকারীরা। পরদিন শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ডেইলি স্টারের পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করা হয়। পরে সেখান থেকে পত্রিকার দুটির কার্যালয়ের সামনে গরু জবাই করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সরকার এই জাতীয় একটি উস্কানিমূলক কর্মসূচির বিরুদ্ধে পূর্বে-পরে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ইসলামিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। তাদের দাবি— ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো পত্রিকা দুটি দেশে ভারতীয় আগ্রাসনে সহায়তা ও শাহবাগী বয়ান তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে বলে বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন। অংশগ্রহণকারীদের দাবি— ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জঙ্গি বানানোর কারিগর হিসেবে কাজ করে। গরু জবাইয়ের দিনে সরকার পর্যাপ্ত সেনা মোতায়ন করে ‘ অপ্রীতিকর ‘ অবস্থা হতে দেয়নি। প্রথম আলো বা ডেইলিস্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার হয় হোক না কেন যে কোন মানদন্ডে ‘ জিয়াফত ‘ হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আক্রমণ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে আক্রমণের সাথে যুক্ত হয়েছে অন্ধ ভারত বিরোধিতা , যার মর্মমূলে রয়েছে সাম্প্রদায়িতকতা। এই আক্রমণের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘ শাহবাগ ‘ বিরোধী বক্তব্য। শাহবাগ আন্দোলন ছিল যুদ্ধবিরোধীদের বিচারের দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন। এই আন্দোলনের বিরোধী ছিল জামায়েত – হেফাজত ও বিএনপি।
প্রেসক্লাবে হামলা
ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব দেশের প্রধান দুটি প্রেস ক্লাব। এই দুইটি প্রেসক্লাব সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেসক্লাব – সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং কার্যনির্বাহী সদস্য শাহানাজ সিদ্দিকী সোমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। ১০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা প্রেসক্লাবে এসে স্মারকলিপি দিয়ে তাদের অপসারণ দাবি করেছিল। তাদের দাবির ‘ যৌক্তিকতা’ বিবেচনা করে ফরিদা ইয়াসমিনদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন হাসান হাফিজ (সভাপতি) ও আইয়ুব ভূঁইয়া (সাধারণ সম্পাদক)। এদিকে ৫ অগাস্টের পর থেকে তিন দফায় প্রায় একশত সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত করেছে জাতীয় প্রেসক্লাব। ফরিদা ইয়াসমিন শ্যামল দত্তদের শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী শুধু এই অভিযোগে অগণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত পেশাজীবী [ সাংবাদিক ] পরিষদের যে কাউকে অপসারণ গণতান্ত্রিক। ১৪ আগস্ট ২০২৪ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে অন্তত ২০ জন সাংবাদিককে আহত করে। হামলাকারীরা হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ক্লাবের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। প্রেস ক্লাবে হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রেসক্লাবের উপর আক্রমণ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বটে।
সাংবাদিক অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেমন সচিবালয় , ব্যাংক হেড অফিস সংবাদ সংগ্রহের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের ব্যাবহার হয়ে থাকে। ইউনুস সরকার কয়কে দফায় প্রায় ১৭৫ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছেন। [ ১১ নভেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো ]
দেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, হামলা, ঘেরাওয়ের হুমকিসহ নানা আক্রমণ হচ্ছে । দৃশ্যত অতি ক্ষমতায়িত কোনো কোনো মহলের স্বার্থের বাইরে গেলেই গণমাধ্যমকে আক্রমণ ও সাংবাদিক হেনন্তা, গণমাধ্যমকে দখল বা খেয়াল খুশিমতো পরিচালনার প্রচেষ্টা চলছে। যা আসলে মুক্ত গণমাধ্যমের সম্ভাবনার জন্য অশনিসংকেত। এই প্রক্রিয়াকে সংহত করতে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাজের জন্য তাদের নিশানা বানাতে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইউনুস সরকার। এভাবে একদিকে সাংবাদিকদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যদিকে বলা হচ্ছে, মিডিয়ার উপর হামলা কোনওভাবেই মেনে নেয়া হবে না।
এর ফলে গণমাধ্যম সেন্সরশিপের ঝুঁকিতে পড়বে।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
শেখ হাসিনা শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল গায়েবি মামলা। বর্তমান সরকারের আমলে যতগুলো মামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগই হত্যা মামলা। কেউ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকলে কিংবা হুকুম দিলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। যারা ঘটনার ধারে কাছেও নেই, তাদের নামে হত্যা মামলা বা অভিযোগ ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে। অধিকাংশ হত্যা মামলায় কোন না কোন ভাবে সাংবাদিকদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসকল মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত শত শত হত্যা মামলায় এজাহারের ধরন প্রায় একই ধাঁচের ৷ এজাহার হচ্ছে অপরাধ সংঘটনের প্রাথমিক নথি এবং মামলার অন্যতম প্রধান ভিত্তি৷ এজাহার যদি আদালতে না টেকে, তাহলে এ ধরনের মামলার কোনো ভবিষ্যৎ নেই ৷ অসংখ্য আসামির পাশাপাশি প্রায় প্রত্যেকটি মামলাতে অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার আসামি করা হয়েছে ৷ অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার আসামি করে ঢালাও মামলা করার অসুবিধা হচ্ছে, প্রথমত পুলিশ এখানে অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায় যে কারো নাম ঢুকিয়ে দিতে পারে এবং তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাম কেটে দিতে পারে ৷ এটাই হচ্ছে গায়েবি মামলা। এসব মামলা তদন্ত করতে গিয়ে অনেক সময় প্রয়োজন হবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলার তদন্তই শেষ করা যাবে না৷ বিচারিক প্রক্রিয়াতে গিয়েও অভিযুক্তের সংখ্যা অত্যধিক হওয়াতে সুষ্ঠু বিচার হবে কিনা সেটি নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়৷ অনেক অভিজ্ঞ আইনজীবী মনে করেন যে, এ ধরনের ঢালাও মামলা ফৌজদারি বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রথম দু’ ধাপই অতিক্রম করতে পারবে না৷
ইউনুস সরকার জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচারের চেয়ে এই মামলায় সাংবাদিকদের ব্যাস্ত ও ভীত সন্ত্রস্ত্র রাখার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের দখলের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে। আবার এই ভয় ভিত্তিতে কিছু সাংবাদিক এক ধরণের আপস-রফার মাধ্যমে গা বাঁচাবে। ঢালাও ভাবে সাংবাদিকদের উপরের মামলার ফলাফল যাই হোক না কেন এই ধরণের মামলা
ড. ইউনূস জুলাই-আগস্ট হত্যা মামলায় ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের নাম আসার বিষয়টি ‘পুরোনো আইন ও চর্চা’র ফল বলে মন্তব্য করেন। তড়িঘড়ি করে মামলা করতে গিয়ে এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। [ প্রথম আলো। ২২ নভেম্বর ২০২৪ ] ড. ইউনূসের এই বক্তব্যের পর ৪ মাস অতিক্রম হয়েছে কিন্তু কথিত ‘পুরোনো আইন ও চর্চা’র শিকার সাংবাদিকরা গায়েবি মামলা থেকে রেহাই পায়নি।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত আট মাসে টেলিভিশন চ্যানেল, পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির সমর্থনে নতুন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে দায়িত্ব নিয়েছেন। দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক, যায়যায়দিন, ভোরের আকাশ, যুগান্তর, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, সময়ের আলো, আলোকিত বাংলাদেশ, জনকণ্ঠ, দেশ রূপান্তর, সমকাল, ভোরের কাগজ এবং কালবেলার সম্পাদক ও মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। অনেক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তবে প্রথম আলো, ইনকিলাব, ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি পত্রিকা তুলনামূলকভাবে অক্ষত রয়েছে। এছাড়া বাংলা নিউজ২৪ডটকম, সারাবাংলা ডট নেট এবং এনটিভি অনলাইনেও উল্লেখযোগ্য রদবদল ঘটেছে।
৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় তিন শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জন গ্রেফতার, ৯২ জনের প্রেস ক্লাব সদস্যপদ বাতিল এবং ১৬৮ জনের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ দেশ ও বিদেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও গণমাধ্যম মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, প্রেস ক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতৃত্বেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তনে বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির ভূমিকা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
৫ অগাস্ট ২০২৪ সালের পর মিডিয়াতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গত পাঁচ দশকের ইতিহাসে এই পরিবর্তন নজিরবিহীন। এত অল্প সময়ে এত পরিবর্তন গণমাধ্যম ইউনুস বান্ধব হয়ে উঠার গোপনত্বকে বুঝতে সহায়তা করে থাকবে।
টিভি
১। দেশের একমাত্র সরকারী টিভি বিটিভি। এর ডিজি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে জামায়াতপন্থী সাংবাদিক মাহবুবুল আলমকে। তিনি আগে নয়াদিগন্ত পত্রিকায় ছিলেন। তিনি দায়িত্ব নিয়েই সারাদেশের সকল জেলা প্রতিনিধির নিয়োগ বাতিল করেছেন ৩০ অক্টোবর ২০২৪ সালে। বিটিভি হেড অফিসের কয়েকজন সাংবাদিক ও সিনিয়র কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছেন। বিটিভিতে যাঁরা চাকুরী ছাড়িয়েছেন , তাঁদের অনেকেই চাকুরীতে ঠুকে ছিলেন ২০০০ সালের আগে। বিটিভির জেলা প্রতিনিধিদের ছাঁটাইয়ের সাথে সাথে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২। দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী মিডিয়া মালিক বসুন্ধরা গ্রুপের রয়েছে ৬টি মিডিয়া হাউজ। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে এগুলো দেখভাল করেন একজন মিডিয়া ডিরেক্টর, তথা বসুন্ধরা গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা ডিএমডি। ৫ আগস্টের পরে বসুন্ধরার মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের এই ডিএমডি পদটির দখল নিয়েছেন সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী। কাদের গণি চৌধুরী যতটা সাংবাদিক এরচেয়েও বেশি জিয়ার সৈনিক। তিনি যতটা সাংবাদিক নেতা তার চেয়েও বিএনপি নেতা। তিনি নিজেই নিজের বেতন ও সুযোগ সুবিধা নির্ধারণ করেছেন। তাঁর অধীনস্ত অন্যদের ক্ষেত্রেও তিনি তাই করেছেন। প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতির বিষয় নয়, নিজেরাই নিজেদের বেতন-ভাতা সুযোগ সুবিধা নির্ধারণ করার এক বিরল ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশের মিডিয়াপাড়ায়।
৩। কাদের গনি চৌধুরী মিডিয়ার দায়িত্ব নিয়েই নিউজ ২৪ এর বার্তা প্রধান রাহুল রাহাকে চাকরিচ্যুত করেছেন এবং শরিফুল ইসলাম শরিফকে বার্তা প্রধানের পদে নিয়োগ দিয়েছেন। নির্বাহী সম্পাদকের পদে নিয়োগ দিয়েছেন ফরহাদুল ইসলাম ফরিদকে। নিউজ ২৪ টিভি চ্যানেল থেকে বিশেষ প্রতিবেদক জয়দেব চন্দ্র দাসকে চাকরিচ্যুত করেছেন।
৪। একাত্তর টিভির লাইসেন্স মোজাম্মেল হক বাবুর নামে। মোজাম্মেল হক বাবু হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী ছিলেন। তিনি কিছু অংশ বিক্রি করেছেন বিনিয়োগকারী মেঘনা গ্রুপের কাছে। একাত্তর টিভি থেকে মোজাম্মেল হক বাবুকেও সিইও পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিশেষ প্রতিবেদক শফিক আহমেদ সিইও হয়ে বসেছেন। ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, নূর সাফা জুলহাজ, এ জেড এম আজাদ, মনির হোসেন লিটন, বায়েজিদ মিল্কী, মাইনুদ্দিন দুলাল, ফারহানা রহমান, তুহিনুর সুলতানা, ঝুমুর বারী, রিয়াজুল বাশার, ফারজানা করিম, সৌমিত্র মজুমদার, ফালগুনি রশিদ, মিশু মিলন সহ সাংবাদিক, প্রযোজক, সহকারী প্রযোজক, ক্যামেরাম্যান, প্রোমো এরকম বিভিন্ন পদের প্রায় ৪০জনকে ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে চাকরিচ্যুত করেছেন শফিক। এছাড়াও একাত্তর টিভির সারাদেশের জেলা/উপজেলা ও বিশেষ প্রতিনিধিদের অধিকাংশকে বাদ দিয়েছে, চাকরিচ্যুত করেছেন।
৫। ডিবিসি নিউজ টিভিতে সম্পাদক পদে নিয়োগ পেয়েছেন লোটন একরাম। সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু ও প্রণব সাহা, প্রধান বার্তা সম্পাদক নঈম তারিক, মাসুদ ইবনে কার্জন, ঝুমি রহমান, কাওসারা চৌধুরী কুমু, আব্দুল্লাহ আল মাসুম, মাছুদুর রহমান, নাদিম মাহমুদ, তাবাসসুম সারওয়ার চৈতি, ফরহাদ ইবনে মালেক, বিকাশ বিশ্বাস সহ প্রায় ২০জনকে চাকরিচ্যুত করেছে লোটন একরাম। এছাড়াও সারাদেশের জেলা/উপজেলা ও বিশেষ প্রতিনিধিদের অধিকাংশকে বাদ দিয়েছে, চাকরিচ্যুত করেছেন।
৬। একুশে টিভির বার্তা প্রধান হয়েছেন হারুনুর রশীদ স্বপন, চাকরিচ্যুত হয়েছেন বার্তা প্রধান রাশেদ চৌধুরী। একুশে টিভিতে সারাদেশের প্রতিনিধি সহ পুরো সেট পরিবর্তন করা হয়েছে। অখিল পোদ্দার, দেবাশিষ রায়, ফারজানা শোভা, আজহারুল ইসলাম অপুসহ অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
৭। এটিএন নিউজে প্রভাষ আমিনকে সরিয়ে বার্তা প্রধানের পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শহীদুল আজমকে। প্রধান বার্তা সম্পাদকের পদে নিয়োগ পেয়েছেন মো. মোশাররফ হোসেন।
৮। এটিএন বাংলায় জ ই মামুনকে সরিয়ে নির্বাহী সম্পাদক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মতিউর রহমানকে।
৯। আরটিভিতে বার্তা প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইলিয়াস হোসেন। ইলিয়াস হোসেন ২০০১-০৬ মেয়াদে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামী উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর এপিএস ছিলেন। চাকরিচ্যুত হয়েছেন প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিকুর রহমান, বার্তা প্রধান আসাদুল্লাহ মারুফ, সিনিয়র সাংবাদিক শরিফ উদ্দিন লেমন, রুহুল আমিন তুহিন প্রমুখ।
১০। বৈশাখি টিভিতে অশোক চৌধুরীকে সরিয়ে জিয়াউল কবীর সুমনকে বার্তা প্রধান করা হয়েছে। প্রধান বার্তা সম্পাদক পদে নিয়োগ পেয়েছেন তৌহিদুল ইসলাম শান্ত। চাকরিচ্যুত হয়েছেন সাইফুল ইসলাম, সঞ্চিতা শর্মা, জয় প্রকাশ প্রমুখ।
১১। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে মামুন আব্দুল্লাহকে সরিয়ে বার্তা প্রধান করা হয়েছে মোস্তফা আকমলকে। চাকরিচ্যুত হয়েছেন আশিস সৈকত, অনিমেষ কর, বিপ্লব রহমান সহ অনেকেই।
১২। এশিয়ান টিভিতে বার্তা প্রধান বেলাল হোসেনকে সরিয়ে সিরাজুল ইসলামকে বসানো হয়েছে। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে হালিমা আক্তার লাবণ্যকে।
১৩। দেশ টিভির বার্তা প্রধান পদে বসেছেন মোঃ মহিউদ্দিন। চাকরিচ্যুত হয়েছেন শামীমা আখতার, জয় কুমার যাদব প্রমুখ।
১৪। সময় টিভির এমডি জোবায়ের আহমেদকে সরিয়ে এমডি হয়েছেন শম্পা রহমান। সদ্যপ্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সনজীদা খাতুনের জামাতা নিয়াজ মোরশেদ হেড অফ এডিটরিয়াল পদে বসে সময় টিভি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন। চাকরিচ্যুত হয়েছেন মুজতবা দানিশ, খান মুহাম্মদ রুমেল, লোপা আহমেদ, আরিফুল সাজ্জাদ, দেবাশীষ কুমার রায়, ওমর ফারুক, বুলবুল রেজা, কামাল হোসেন শাহরিয়ার প্রমুখ।
১৫। গাজী টিভির বার্তা প্রধানের পদে বসেছেন গাওসুল আযম বিপু।
১৬। মোহনা টিভির হেড অব এডিটোরিয়াল পদে বসেছেন শাহীন রাজা।
১৭। গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক হয়েছেন কাদিয়ানী নাজমুল আশরাফ। চাকরিচ্যুত হয়েছেন সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
১৮। বাংলা টিভি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন সম্পাদক নজরুল কবীর।
১৯। নাগরিক টিভি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন প্রধান বার্তা সম্পাদক দ্বীপ আজাদ, জয়ন্ত কর্মকার, তুহিন খলিফা, সুরাইয়া সামন্তা, পিন্টু হাজং সহ প্রায় ৩৯জন।
২০। সম্প্রতি চাকরিচ্যুত হয়েছেন এখন টিভির নিউজরুম এডিটর ও উপস্থাপিকা জেনিসিয়া বর্ণা সহ আরেকজন মিডিয়া কর্মী।
২১।। গ্রীন টিভি বন্ধ করে দিয়েছে ইউনূস সরকার।
২২। অক্ষত আছে বাংলাভিশন, এনটিভি, এখন টিভি। এদের গায়ে একটি ফুলের টোকাও লাগেনি। গত ১৫বছরও তারা এভাবেই ছিলেন।
দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল
১। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ডিএমডি পদ দখল করেই সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনকে সরিয়ে কবি হাসান হাফিজ সম্পাদক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। চাকরিচ্যুত হয়েছেন নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী, সিনিয়র সাংবাদিক সজীব ঘোষ প্রমুখ।
২। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে সম্পাদক নঈম নিজামকে আগেই বিদায় দিয়ে আবু তাহেরকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদে নিয়োগ দিয়েছিল বসুন্ধরার মালিকপক্ষ।
৩। দৈনিক ইত্তেফাকে নির্বাহী সম্পাদক পদে বসেছেন সালেহ উদ্দিন। চাকরিচ্যুত হয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি শ্যামল সরকার।
৪। দৈনিক যায়যায়দিনের নির্বাহী সম্পাদক পদে বসেছেন খুরশীদ আলম। চাকরিচ্যুত হয়েছেন নির্বাহী সম্পাদক অরুণ কুমার দে।
৫। দৈনিক ভোরের আকাশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের পদে বসেছেন ইলিয়াস উদ্দিন খান। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সম্পাদক মনোরঞ্জন ঘোষালকে।
৬। যমুনা গ্রুপের পত্রিকা দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলমকে বিদায় দিয়ে কবি আবদুল হাই শিকদারকে নিয়োগ দিয়েছে।
৭। রংধনু গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিকে সরিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মোরছালীন বাবলাকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
৮। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক সময়ের আলোর সম্পাদক কমলেশ রায়কে সরিয়ে সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিমকে সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে।
৯। দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শামীম সিদ্দিকীকে চাকরিচ্যুত করেছে।
১০। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত মেজর শেখ আফিজুর রহমান। তিনি ইতিপূর্বে দৈনিক বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
১১। রূপায়ন গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুনকে সরিয়ে কামাল উদ্দিন সবুজকে সম্পাদক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
১২। সম্প্রতি হা-মীম গ্রুপের পত্রিকা দৈনিক সমকালের সম্পাদক পদে নিয়োগ পেয়েছেন শাহেদ মুহাম্মদ আলী। ইতিপূর্বে সম্পাদক আলমগীর হোসেন চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং শাহেদ মুহাম্মদ আলীকে নিয়োগের প্রেক্ষিতে চাকরি ছাড়েন প্রধান বার্তা সম্পাদক খাইরুল বাশার শামীম।
১৩। দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত কারাগারে। পত্রিকাটি দখলের মুখে মালিকপক্ষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
১৪। সর্বশেষ দৈনিক কালবেলার সিংহভাগ মালিকানা কিনে নিয়েছেন বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সাবেক এপিএস মিয়া নুরুদ্দিন অপু। এখন তিনি পত্রিকাটির প্রকাশ। কালবেলা থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন রীতা ভৌমিক।
১। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ডিএমডি পদ দখল করেই সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী বাংলানিউজ২৪ডটকম-এর সম্পাদক জুয়েল মাজহারকে বিতাড়িত করেন এবং সম্পাদক পদে নিয়োগ দেন লুৎফর লুতফর রহমান হিমেলকে।
২। সারাবাংলা ডট নেটের হেড অব নিউজ হয়েছেন গোলাম সামদানী। চাকরিচ্যুত হয়েছেন প্রধান সম্পাদক রফিকুল্লাহ রোমেল, প্রধান বার্তা সম্পাদক রহমান মুস্তাফিজ, আজমল হক হেলাল, সৈকত ভৌমিক, নৃপেন্দ্রনাথ রায়, সন্দীপন বসু প্রমুখ।
৩। এনটিভি অনলাইন থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ফখরুল শাহীন।
৪। বাংলাদেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালের নাম ও সংখ্যা বের করা প্রায় অসম্ভব। কাজেই এদের কে অক্ষত ও কে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তা জানা সম্ভব হয়নি।