ফরহাদ মজহার কবি ও চিন্তক হিসাবে সমাধিক পরিচিত। বিভিন্ন কারণে আলোচনায় ফরহাদ মজহার। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। ফরহাদ মাজহারের ” ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না ” বক্তব্য আলোচিত হচ্ছে। পেশায় তিনি এনজিও পরিচালক। উবিনীগ – উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা এর প্রতিষ্টাতা। ১৯৮৪ সালে এই এনজিও এর যাত্রা শুরু। বর্তমানে উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার। উবিনীগের সহযোগী হিসাবে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নামে আরেকটি এনজিও এর শুরু ১৯৮৯ সালে। শুরু থেকেই ফরিদা আখতার নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা প্রতিষ্টানের কর্ণধর। ব্যাক্তি জীবনে ফরহাদ মজহার ও ফরিদা আখতার একই ছাদ -চালার নিচে বসবাস করে আসছেন ১৯৮০ দশকের শুরু থেকেই। হাসিনা শেখের পতনের পরে ইউনুস সরকাররের উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছেন ফরিদা আখতার। ফরহাদ মজহার কবি ও চিন্তক এই পরিচয়ের আড়ালে তার রাজনৈতিক চিন্তা ও উদ্দ্যোগ ঢাকা পড়ে গেছে। ফরহাদ মজহারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০ এর অধিক। তার অন্যতম আলোচিত বই হচ্ছে ‘ রাজকুমারী হাসিনা’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৯৭ সালে।
ফরহাদ মাজহারের রাজনীতি
ফরহাদ মজহার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময় থেকেই। যুদ্ধ পূর্ব কালে তিনি চীনপন্থী বামপন্থার সাথে যুক্ত বা সহনানুভুতিশীল ছিলেন। যুদ্ধত্তোর কালে তিনি নবগঠিত পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। যুদ্ধত্তোর বাংলাদেশে যখন সকল চীনপন্থী কমিউনিস্ট দল গুলো বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান বা অস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই সময় ‘ পেয়ারা বাগান ‘ এর মুক্তিযুদ্ধের আখ্যানের উপর ভর করে পূর্ব বাংলার সর্বহারা রাজনীতির উম্মেষ ও বিকাশ হয়েছিল। সর্বহারা পার্টি রাজনীতিতে নাড়া দিতে সমর্থ হয়েছিল। শুরু থেকেই দলের মধ্যে খুনাখুনি শুরু হয়। সর্বহারা পার্টির হাতে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , কবি হুমায়ন কবীর খুন হয়েছিলেন ১৯৭২ সালের ৬ জুন। ” হুমায়ুনের মৃত্যুর পর বন্ধু কবি ফরহাদ মজহার পুলিশি জেরার মুখে পড়েন। লেখক আহমদ ছফার লেখায় ফরহাদ মজহারের প্রতি সন্দেহের ইঙ্গিত ছিল। (১)
কবি হুমায়ন কবিরের হত্যাকান্ড নিয়ে পুলিশি জেরার মুখে ফরহাদ মাজহার দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। প্রশ্ন জাগতে পারে মুজিব সরকার কেন সর্বহারা পার্টির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকলো। ১৯৭২ সালের জুন মাস অবধি সর্বহারা পার্টি কোন মারমূখী অবস্থানে ছিল না। হুমায়ন কবীর হত্যার পর পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। সে সময় প্রধান মন্ত্রী শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে সুলতানা রেবুর পরিবারের জন্য ২হাজার টাকার চেক অনুদান নিয়ে দিয়েছিলেন নির্মল সেন। (২) সুলতানা রেবুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী ১৯৭২ সালে পেয়েছিলেন। কবি হুমায়ন কবিরের স্ত্রী সুলতানা রেবু যুদ্ধ পূর্ব কালে তৎকালীন আরসিপি / সমাজবাদী দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। তৎকালীন সময়ে পাটকল শ্রমিক আন্দোলনে এই দলের বড় ধরণের প্রভাব ছিল।
ফরহাদ মাজহারের বর্ধিঞ্চু পরিবার শিক্ষা- দীক্ষায় অগ্রসর ছিল। আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিতে তাঁদের শক্ত অবস্থান ছিল। এই পরিমণ্ডল হুমায়ন কবির হত্যা মামলা থেকে বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। জাসদের তাত্বিক খাত সিরাজুল আলম খান ও কামরুল আলম খান পারিবারিক ভাবে ফরহাদ মাজহারের মামাতো ভাই। হুমায়ন কবীরের হত্যা মামলা থেকে ফরহাদ মজহারকে রক্ষা করতে এই দুইজনের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট জানা যায় না। উল্লেখ্য তখন জাসদ গঠিত হয়নি কিংবা ছাত্রলীগের ভাঙ্গন হয়নি। (৩)
১৯৮০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক ছাত্র ঐক্য ফোরাম নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এই সংগঠনের পিছনে ছিলেন ফরহাদ মাজহার। জেনারেল এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ঐক্য প্রক্রিয়া নামের একটি দল ছিল। এই দল একসময় ৫ দলীয় বাম ফ্রন্টের অংশ ছিল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কোন এক পর্যায়ে এই আন্দোলন থেকে তিনি খসে পড়েন। ফরহাদ মাজহার সুলেখক , প্রচুর লিখছেন কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি নীরবতার আশ্রয় নিয়েছেন। মনে করা হয়ে থাকে এনজিও কার্যক্রমের অর্থছাড়ের সুবিধার জন্য রাজনীতি ‘ খেলা ‘ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে ছিলেন। উল্লেখ্য , সকল এনজিও ১৯৭৮ সালের বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যকলাপ) নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের অধীনে নিবন্ধিত। বিদেশী অনুদান ছাড়ের জন্য সরকারের নেক নজরের প্রয়োজন হয়। ১৯৯০ সালে সরকারের একটি প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।
২০১৩ সালে ফরহাদ মজহার জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি গঠন করেছিলেন। অজ্ঞাত কারণে ‘ ইনসাফ কায়েম কমিটি ‘ তিনি ঝাঁপির মধ্যে ভরে রেখেছিলেন। ২০২৩ সালের মার্চে সামান্য রংচং করে ইনসাফ কায়েম কমিটিকে ঝাঁপি থেকে বের করে আনেন। জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির নামের আগে যুক্ত হয় ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইট। সংগঠনটির নাম দাঁড়ায় ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইট জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি। প্রসঙ্গতঃ ইনসাফ কায়েম কমিটির ভাষান্তর সিভিল রাইট নয়। ইনসাফ শব্দটি আরবী। ইংরেজিতে – justice, impartiality। বাংলায়- ন্যায়বিচার, সুবিচার, নিরপেক্ষতা। দেশে বাংলা ভাষার মর্যাদা হচ্ছে সতীনের পুত্রের মতন। ব্যানার , সাইনবোর্ড , ফেস্টুনে ইংরেজি না থাকাটা বেমানান !সংগঠন পুনর্জীবন সম্পর্কে ফরহাদ মজহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৩ সালে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি গঠিত হয়। এরপর নানা প্রতিকূলতার কারণে সেটি আর সক্রিয় করা হয়নি। ( প্রথম আলো , ১৭মার্চ ২০২৩ ) । (৪) ফরহাদ মজহার জ্ঞানী মানুষ , গুছিয়ে কথা বলতে দক্ষ। এই দক্ষতার ঘোরটোপে ‘ নানা প্রতিকূলতা ‘ দিয়ে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা মাটি চাপা দিতে সফল হয়েছিলেন। সকলেই স্বীকার করেন শেখ হাসিনার আধিপত্যবাদী শাসনের তীব্রতা ২০১৩ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে অনেক গুন্ বেশি ছিল। ২০১৩ সালে যদি ‘ প্রতিকূলতা ‘ এর কারণে যদি ইনসাফ কায়েম কমিটি সচল পারেননি , তাহলে ২০২৩ সালে কিভাবে ‘ প্রতিকূলতা ‘ অতিক্রম করে ইনসাফ কমিটিকে সামনে আনলেন। কি ভাবে সম্ভব হলো বনানীর শেরাটন হোটেলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নৈশভোজ করার ।
আনসার অধিকার আন্দোলন ১৯৯৪ থেকে ২০২৪
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বাংলাদেশের একটি আধা-সামরিক বাহিনী। সংখ্যার বিচারে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বাহিনীও বটে ।সরকারি হিসেবে, বর্তমানে বাংলাদেশে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬৩ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৬২ লাখেরও বেশি গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদস্য। ১৯৯৪ সালে আনসাররা বিভিন্ন দাবি নিয়ে টাঙ্গাইলের সখিপুর হেড কোয়াটারে আন্দোলন করছিল। আনসাদের অন্যতম দাবি ছিল চাকুরী স্থায়ীকরুন। তৎকালীন বিএনপি সরকার এই আন্দোলনকে দমন করতে বিমান হামলা চালিয়েছিল , হত্যার শিকার হয়েছিল চাকুরীর নিশ্চয়তা প্রত্যাশী আনসারের। কয়েক হাজার আনসার চাকুরিচ্যুত এবং কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে প্রকাশ্যে কোন রাজনৈতিক দল বা বুদ্ধিজীবী সরকারি দমন পীড়নের প্রতিবাদ করেনি। একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিল ফরহাদ মাজহার। এই প্রতিবাদের কারণে তৎকালীন বিএনপি সরকার ফরহাদ মাজহারকে বিনা বিচারে জেলে ঢুকিয়েছিল। আনসার বিদ্রোহে সরকারি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৪ জন , আহত হয়েছিলেন ১৫০ জন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে আনসার বিদ্রোহের ঘটনায় শাস্তি হিসেবে প্রায় ২৫০০ আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করা হয়। এদের মধ্যে অনেকে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে পরবর্তীতে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতের মাধ্যমে ২০১৮ সালে বিদ্রোহের অভিযোগ থেকে খালাস পান এক হাজার ৪৪৭ জন। তবে তাদের মধ্যে যাদের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয় আদালত। আর যাদের চাকরির বয়স শেষ, তারা চাকরিতে যতদিন ছিলেন তাদেরকে ততদিনের পেনশন সুবিধা দেয়ার জন্যও সরকারকে নির্দেশনা দেয়া হয়। (৫)
শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর আনসাররা চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে আসছিল অগাস্ট ২০২৪ সালের শেষ সপ্তাহে। এই আন্দোলনকে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে দমন করে ইউনিস সরকার। তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে তাদেরকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছেন, কেউ বের হতে পারছে না। এ ঘটনার পরেই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে সচিবালয়ের সামনে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সরকার আনসাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের মধ্যে হাসিনা সরকারের ‘ অনুপ্রবেশ ‘ খুঁজে পেয়েছিল। (৬) ১৯৯৪ সালে আনসাদের চাকুরী জাতীয় করণের দাবিকে সমর্থন করে ফরহাদ মাজহার জেলে গিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে আনসাদের একই জাতীয় আন্দোলনের ব্যাপারে ফাহাদ মাজহার নিরব ছিলেন। মব সন্ত্রাস দিয়ে গরিব আনসাদের পেটানোর বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারেননি। কারণ এই সরকারের রয়েছে ঘরের মানুষ ‘ ফরিদা আখতার !
সাম্প্রতিক অবস্থান
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফরহাদ মাজহার ” সংবিধান বাতিল এবং ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করতে হবে” / ড. মুহাম্মদ ইউনূস সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিনিধি, তাঁর নির্দেশই এখন আইন। কারণ তিনি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় ধারণ করেন।” এই জাতীয় বক্তব্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন। (৭) ফরহাদ মজহার বক্তব্য ” ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা শতভাগ সমর্থন করি। ” (৮) এই ধারাবাহিকতায়, শুক্রবার , ১১ এপ্রিল ২০২৫ ‘জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর’ আয়োজিত ‘গণমানুষের জাগ্রত জুলাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন ফরহাদ মাজহার। এই অনুষ্ঠানে ফরহাদ মাজহার বলেন “ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না, আসে লুটেরা শ্রেণি । (৯) এইবক্তব্যের মধ্য দিয়ে ফরহাদ মাজহারের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণউঠে এসেছে। পাশাপাশি রাষ্ট্র, সমাজ ও গণতন্ত্র নিয়ে প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলেছেন। ফরহাদ মাজহারের এই বক্তব্য কি নিছক ভোট-বিরোধিতা ? না কি বর্তমান ক্ষমতাসীন ইউনুস সরকারের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি। ফরহাদ মাজাহাররের সাথে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন ” আমরা অনির্বাচিত এই কথা কে বলল।“(১০) প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নিজ নিজ বক্তব্যের জন্য দায়ী। তবে কাকতলীয় ভাবে সরকারের উপদেষ্টা -মন্ত্রী ফরিদা আখতার এবং ক্ষমতার বাইরে অবস্থানকারী ফরহাদ মজহার
“ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না, আসে লুটেরা শ্রেণি”। ফরহাদ মাজহারের এই বক্তব্য এই উক্তি জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়—তাহলে কিসে গণতন্ত্র হয় ? কেমন সে রাষ্ট্র যেখানে লুটেরার বদলে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে উঠবে ? ভোটব্যবস্থাকে খারিজ করার পর কোন প্রক্রিয়ায় জনগণের সিদ্ধান্ত নেবে, কীভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, ভিন্নমত বা সংখ্যালঘুর অধিকার কীভাবে রক্ষিত হবে—এই প্রশ্নগুলোর কোনো স্পষ্ট উত্তর মজহারের গত পঞ্চাশ বছরে প্রকাশিত বই – পুস্তকে ভাবনায় পাওয়া যায় না। নিবার্চনী রাজনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতি স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ নিনেয় । হাসিনার শাসনামলের ভোটার বিহীন নিবাচন গুলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নির্বাচনী গণতন্ত্রের বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নির্বাচনী ব্যাবস্থা অন্তত সীমিত আকারে হলেও সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর প্রকাশের একটি পরিসর খুলে দেয়। একে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিলে স্বৈরতন্ত্রের পথ প্রশস্থ । যদি নির্বাচন বিদ্যমান অবস্থা টিকিয়ে রাখার প্রক্রিয়া।
ভোটব্যবস্থাকে খারিজ করার পর কোন প্রক্রিয়ায় জনগণের সিদ্ধান্ত নেবে, কীভাবে তা বাস্তবায়িত হবে? ভিন্নমত বা সংখ্যালঘুর অধিকার কীভাবে রক্ষিত হবে ?—এই প্রশ্নগুলোর কোনো স্পষ্ট উত্তর মজহারের গত পঞ্চাশ বছরে প্রকাশিত বই – পুস্তকে পাওয়া যায় না। নির্বাচন বিদ্যমান অবস্থা টিকিয়ে রাখার প্রক্রিয়া। তবে নিবার্চনী রাজনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতি স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ নেয় । হাসিনার শাসনামলের ভোটার বিহীন নিবাচন গুলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নির্বাচনী গণতন্ত্রের বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নির্বাচনী ব্যাবস্থা অন্তত সীমিত আকারে হলেও সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর প্রকাশের একটি পরিসর খুলে দেয়। নির্বাচনী ব্যাবস্থা বাতিল করে দিলে স্বৈরতন্ত্রের পথ প্রশস্থ হয় ।
১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সফরকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘সাধারণ মানুষের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো হয়েছে…ওই রাস্তা থেকে আমারে বলতেছিল, আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন। (১১) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ‘ রাস্তা ‘ থেকে বলার দাবি হাস্যকর ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ঢোল মাদল বাজানো। অনির্বাচিত ভাবে ইউনুস সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য ‘ রাস্তা’ থেকে ফরহাদ মাজহাররা এগিয়ে এসেছেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিরোধিতা করেছেন। রাস্তা থেকে জনগণ কি অনির্বাচিত হবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কথা বলেছে ? রাস্তার জনগণ আপনাকে চাচ্ছে কিনা তা পরিমাপের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনেই অনীহাকে জন মাসে থাই দেওয়ার জন্য ফরহাদ মাজহাররা মাঠে নেমেছেন। কোথায় কোথায় ব্যানার নিয়ে নেমে পড়েছেন কেউ কেউ , গণমাধ্যম এই গুলোর ফেরিওয়ালা হচ্ছে ইউনুস রক্ষার রকমারি উদ্যোগ।
বাংলাদেশ নির্বাচনের পথে যাচ্ছে কিনা, গেলে কোন ধরণের নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে এটি বড় প্রশ্ন। ভয়ের কথা , এখন নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলছে এতকাল নির্বাচনের জন্য আহাজারি করা বিভিন্ন মহল।
সহায়ক তথ্য সূত্র
১. (ক ) আদিত্য কবির, সুলতানা রেবু ও এক যোদ্ধা পরিবার- শেলী জামান খান, প্রথম আলো – প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ।
(খ) ‘কবি হুমায়ুন কবির: বিপ্লবের ভেতর-বাহির’, শওকত মাসুম আরক, তৃতীয় সংখ্যা, ২০১৬, বরিশাল।
(২) আমার জবানবন্দি – নির্মল সেন , পৃষ্টা ৫৫৮
(৩) ছাত্রলীগের আনুষ্টানিক বিভক্তি হয়েছিল ২১ জুলাই ১৯৭২ এবং জাসদের প্রতিষ্টা হচ্ছে ৩১ অক্টোবর ১৯৭২।
(৪) ফরহাদ মজহার সামনে আনলেন ইনসাফ কায়েম কমিটি, তুললেন নতুন দাবি । ১৭ মার্চ ২০২৩ । প্রথম আলো ।
(৫) আনসার বিদ্রোহ: ১৯৯৪ সালে হেলিকপ্টার, মর্টার, রকেট লঞ্চার ও মেশিনগান দিয়ে যেভাবে দমন করা হয়েছিল বিদ্রোহী আনসারদের। ৫ ডিসেম্বর ২০২২। বিবিসি বাংলা, ঢাকা।
(৬) সচিবালয়ের সামনে ঠিক কী ঘটেছিল? শিক্ষার্থী-আনসার সংঘর্ষের শুরু কীভাবে? .২৬ অগাস্ট ২০২৪। বিবিসি বাংলা, ঢাকা।
(৭) সাক্ষাৎকার: ফরহাদ মজহার: সংবিধান বাতিল এবং ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করতে হবে। ১৫ আগস্ট ২০২৪। সমকাল।
(৮) এনসিপি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না : ফরহাদ মজহার। ১৯ এপ্রিল, ২০২৫। কালের কণ্ঠ।
(৯) ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না, আসে লুটেরা শ্রেণি: ফরহাদ মজহার। ১২ এপ্রিল ২০২৫। সমকাল।
(১০) আমরা অনির্বাচিত এই কথা কে বলল : ফরিদা আখতার। ১৩ এপ্রিল ২০২৫। প্রথম আলো।
(১১) সরকারকে ৫ বছর ক্ষমতায় রাখার কথা আমি নই জনগণ বলেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ১৬ এপ্রিল ২০২৫। যুগান্তর।