বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ন

রাজনীতির জিলাপির প্যাচের জটিল প্যাচ – বুলবুল তালুকদার 

বুলবুল তালুকদার 
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

“খোলা জানালা”- একাত্তরের প্রশ্নের মীমাংসা করতে হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা চাইতে হবে-‘ মাহফুজ। এমন ফেসবুক পোষ্ট দেখে এক বিরাট অংশ খুশিতে আটখানা। কেন? এই বুঝি মাহফুজ সঠিক পথে এসেছে এবং জামায়াতের শাস্তি নিশ্চিত হবে। একটু থামুন। বিষয়টি অতটা সহজ নয়। এখানেও আছে রাজনৈতিক ডুগডুগি। বাজানো হচ্ছে তালে তালে। কিভাবে?
লেখাটি সরাসরি ব্যক্তির নামে লিখতে হচ্ছে কারণ ব্যক্তিটি রাষ্ট্রের চেয়ারে এবং ব্যক্তির আপন প্রকাশ বলেই। মাহফুজ মাদ্রাসার ছাত্র হলেও সে মূলত হিযবুত তাহরীর একনিষ্ঠ সদস্য ছিল। আপনাদের স্মরণ থাকার কথা যে, তার কাছের বা সাথের লোকজন অভিযোগ তুলেছিল প্রমাণসহ, মাহফুজ শিবির থেকে সরে গিয়ে হিযবুত তাহরীতে যোগদান করেছিল। আপনাদের আরও স্মরণ থাকার কথা, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। গোষ্ঠীটি বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নিষেধাজ্ঞার সময়, গ্রুপটি তার ঠিকানা এইচএম সিদ্দিক ম্যানশন, ৫৫/এ পুরানা পল্টন, ৪র্থ তলা, ঢাকা ছিল।
এই হিযবুততাহরী, আক্ষরিক অর্থে “আল্লাহর দল” অথবা “স্রষ্টার দল” এবং লেবানন ভিত্তিক ইসলামপন্থী একটি রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন। দলটির জিহাদ কাউন্সিল নামক সামরিক শাখা এবং লয়ালটি টু দ্য রেসিস্ট্যান্স ব্লক নামক রাজনৈতিক শাখা রয়েছে। যার একটি শাখা বাংলাদেশে ছিল। হিযবুত তাহরী তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতেই অর্থাৎ খিলাপত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসে।
লক্ষ্যণীয বিষয় হলো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি তার চাকরি হারিয়েছিলেন হিযবুত তাহরীর সাথে সংযোগ থাকার কারণে। সেই নাসিমুল গনি এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হয়েছে। আরও স্মরণ করুন, হিযবুত তাহরীর সরাসরি বহু জঙ্গী সদস্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামী যারা পাঁচ আগস্ট পরবর্তী জেল থেকে এক দিনেই সবাই মুক্ত হয়ে আবার সমাজে মিশে গেছে এবং কেউ কেউ হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্য যে, ওরা জেলে না থাকলে ব্লগারদের অনেকেই এতদিনে পরপারে থাকতো। এই সকল কর্মকাণ্ড মিলিয়ে মাহফুজে হঠাৎই জামায়াত বিরোধীতা মোটেও হালকা কিছু নয়। জড়িয়ে আছে সুকৌশলে হিযবুত তাহরীর একপ্রকার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হবার তারনা বা উদ্ধারকরণ।
লক্ষ্য করুন, বর্তমানে দেশে মূলত জামায়াতের চাপেই সরকার আওয়ামী লীগকে একপ্রকার নিষিদ্ধকরণ করতে বাধ্য হয়েছে। হ্যা সাথে এনসিপি নামক নতুন দলের ভূমিকা ছিল তবে মূলত পিছনের উপসর্গ জামায়াত। এটা প্রকাশ্য সত্য। তবে জামায়াত রাজনীতির ময়দানে একপ্রকার নিজেদের কবরাটাই খুড়েছে মাহফুজের কৌশলি চক্রে। কিভাবে ?
মাস্টারমাইন্ড মাহফুজ জামায়াতকে দূর্বল করতেই সঠিক সময়ে ৭১ প্রশ্ন তুলে কুপোকাত করতে পেরেছে। কেননা সামনের কোন একদিন নির্বাচন হতে হবে যদি সরকারের ভিন্ন মতলব না থাকে। আপাতত সে দিকে যাচ্ছি না। জামায়াতের নিবন্ধন আদালতের দ্বারাই বাতিল হয়ে আছে। সামনের নির্বাচনে জামায়াতকে আদালত থেকেই নিবন্ধন ফিরে পেতে হবেই। এখন মাস্টারমাইন্ড মাহফুজের এমন সময় এমন বচন ও ক্ষমার দাবী নিয়ে প্রশ্ন আদালতে নিশ্চয়ই উঠবে। জামায়াতকে প্রমাণ করতে হবে যে, ৭১ এ জামায়াতের ভূমিকা কি ছিল? জামায়াতের সাধ্য নেই প্রমাণ করার যে ৭১ এ বাংলাদেশের পক্ষে ছিল এবং হত্যা- খুন- লুটরাজে জড়িত ছিল না। কেননা ইতিহাস সাক্ষ্য হয়ে সামনে চলে আসবে।
সমস্যা জামায়াতের ঘাড়ে আরও আছে যে, জামায়াতের প্ররোচনায় যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, ৭১ এর কর্মকাণ্ডের পরেও যদি জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পায় তাহলে আওয়ামী লীগের ফিরে না পাবার আর কোন কারণ থাকে না এবং আওয়ামী লীগ ফিরে না পেলে আদালতের বিচারক নিয়ে প্রশ্ন উঠবে সাধারণ চোখেই। আবার জামায়াতের দিকেই সবাই অঙ্গুলী তুলবে কেননা বর্তমানে আদালত পাড়া জামায়াতের ঈসারায় চলে বলে বাজারে প্রমাণসহ কথা চলছে। মাহফুজের সুকৌশলে চতুরতাযর কল্যাণেই জামায়াত পড়ছে শাখের করাতের নিচে। বলাই বাহুল্য জামায়াত- শিবিরের সাথে মাহফুজ দন্দ মূলত বেশ গভীরে বলে আপাতত মনে হচ্ছে। যা এতদিন বোঝার কোন উপায় ছিল না।
মাহফুজ যে স্ট্যাটাস দিয়েছে সেটার মূলে বা গোড়ায় না গিয়ে বা সঠিক উপলব্ধি না করেই একপ্রকার “মাহফুজ বন্দনা- স্তুতি- পূজা- অর্চনা বেশ চলছে তবে যত কথাই বলা হোক, গোবরে পদ্মফুল গজালেও গোবরকে ফেলে দেওয়া যায় না। জামায়াতের গোবরের পদ্মফুল মাহফুজ এই জাতিকে স্বাধীনতার ছোবক শেখায় এবং বাঙালি হজম’ও করে!। তবে গোড়ায় দেখে না।
যেখানে মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র, সকলের সাম্যের রাষ্ট্র, সকল ধর্মের- বর্ণের রাষ্ট্র, সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে, ধ্বংস করে, একটি ধর্মাশ্রিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাফেলায় এই মাহফুজরা সবাই একই কাতারে অথচ এই মাহফুজ শেখায়, “মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন মীমাংসা করতে” এবং আমরা বাঙালিরা অতি জ্ঞানের বুঝে তখন গদ গদ করে, মাহফুজ- মাহফুজ ডাক পারি। তবে মাহফুজ আছে তার আপন ডাকে, হিযবুত তাহরীর ডাকে এবং কৌশলে খেলে যাচ্ছে। লক্ষ্য করে থাকবেন, মাহফুজ সাম্যের কথা বলে জোরে সরে অথচ ধর্মনিরপেক্ষতায় মুখে কুলুপ। মাহফুজ ফ্যাসিস্ট সরকারের হাজার হত্যার কথা বলে তবে ৭১ এর ৩০ লাখ হত্যা আর ৩ লাখ মা- বোনের ইজ্জতের বেলায় চুপ এবং মুখে কোন উচ্চারণ ছিল না তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে কৌশলে জামায়াতকে একা মুখোমুখি দাঁড় করাতে বেশ দক্ষতা দেখিয়েছে, মাহফুজ নামক খিলাফত বস। মাহফুজ পলংবাদ বলে তবে ম্যাটিকুলাস প্লানের মাস্টারমাইন্ড সেখানে চুপ বা বলতে মানা। সেই মাহফুজে বাঙালি ” সূর্যের রশ্মি” দেখে, “আলোর ঝলক” দেখে, “বিদ্যুতের গতি” দেখে। বুঝুন বাঙালির বুঝ।
মাহফুজরা বাস্তবিক অর্থেই সফল কেননা বাঙালিরে বোকা বানাবার তরিকাটা বেশ ভালই বুঝেছে এবং বাঙালিরে হাকীকত লাভের পথটাও বেশ চিনে ফেলেছে, এই মাহফুজ’ রা। ইতিহাসের সত্য কখনো কখনো বাঁধাগ্রন্থ হয় বটৈ তবে ইতিহাসের সত্যকে লুকায়ীত রাখা যায় না। অত্যন্ত দুঃখজনক যে, দেশটির জন্মসূত্রের ৫৩ বছর পর আজ নানান চক্রে কেউ কেউ শঅরিয়ার মাধ্যমে সকলের অধিকার ক্ষুন্ন করতে চায় আবার কেউ কেউ খিলাপতের স্বপ্নে। উদ্দেশ্য তাদের সবার একই তবে তাদের যাতাকলে আজকের দিনে এসেও তাদের কটুকৌশলে সাধারণ জনমানুষদের নাভিশ্বাস উঠে। যা ছিল অপ্রয়োজনীয় কেননা দেশের অভ্যুত্থানের পরে জনমানুষের ভাবনার বাহিরেই যেন ক্রিয়াকলাপ হচ্ছে।
এই দেশটির জন্মসূত্র স্পষ্ট করে যে, এই দেশটি কোন ধর্মের আবরণে বা খিলাপতের আবরণে আসার জন্য জন্ম হয়নি। দেশটির জন্মের পিছনে এত রক্ত ও ইজ্জত ছিল সাধারণ নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের সাথে এই মাটির আলো- বাতাসের সাথে কবির লেখা সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলায় জনমানুষের হাসি- খুশির একটি সামাজিক বন্ধনের দেশ হবার জন্য । সেই দেশটি হতে আবার কত লড়াই হবে কে জানে?
বুলবুল তালুকদার 
সম্পাদক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য 
অষ্ট্রিয়া- লিঞ্জ 


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!