বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯ অপরাহ্ন

ইউনূসের পদত্যাগের ব্ল্যাক মেইল – অপু সারোয়ার

অপু সারোয়ার
শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

এক
দেশে এখন প্রাপ্ত বয়স্কদের শিশুসুলভ গোঁয়ার্তুমিতে রাজধানীর জনজীবন জিম্মি। এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে মুহম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের চিন্তা। প্রধান উপদেষ্টা হতাশ–ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ গনমাধ্যম থেকে সামাজিক মাধমের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। অথচ মাত্র এক মাস আগে [ ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ] কাতার ভিত্তিক আল-জাজিরা কে সাক্ষাৎকারে প্রফেসর ইউনুস বলেছিলেন ” মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। ” মান-অভিমান ভাঙ্গার নতুন নাটক মঞ্চায়নের প্রস্তুতি চলছে। আগামী কয়েক সপ্তাহ শাহবাগ সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ” মার্চ ফর ইউনুস ” কর্মসূচি নাটকের মঞ্চায়ন হবে। আর এই মঞ্চায়নকে জনসমর্থন হিসাবে প্রচার করবে দেশে বিদেশের গণ মাধ্যম। গত বছর ৮ আগস্ট ২০২৪ অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় প্রফেসর ইউনুস। তখন কেউ ভাবতে পারেননি, সাড়ে ৯ মাসের মাথায় পদত্যাগের নাটক মঞ্চায়ন করে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাবেন।
দুই
প্রধান উপদেষ্টা কোন সাংবিধানিক পদ নয়। এই পদত্যাগ কোন সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি করবেন। হাসিনার পদত্যাগের পর মব তৈরির মাধ্যমে হাইকোর্টে থেকে একটি ‘ মতামত ‘ কাগজ বের করে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতার ঢোল-মাদল বাজানো হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে যে মতামতের দোহাই দেওয়া হয়েছে সেই কাগজের প্রাতিষ্টানিক বৈধতা ও গ্রণযোগ্যতা নিয়ে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে। এই বিবেচনায় মুহম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের একতারার ঝংকার নতুন কোন সংকটের সৃষ্টি করবে না।
বৃহস্পতিবার , ২২ মে উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা অনির্ধারিত বৈঠক করেন ড. ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ইউনুস সরকারের ব্যার্থতা স্বীকার করে ‘ নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ‘ গঠনের আলোচনা ও পদত্যাগ ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ভাষণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হাঁটেন মুহম্মদ ইউনুস । উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সংশয়, ঢাকায় প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোদের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতার বিষয় গুলো আলোচনায় আনেন মুহম্মদ ইউনুস।
একই দিন সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম যমুনায় সঙ্গে দেখা করেন। ইউনুস এবং এনসিপির বৈঠক ছিল রাজনীতি নির্ধারণের মিটিং। এনসিপি নেতারা যথারীতি ইউনুসকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করেছেন। বৃহস্পতিবারের পরের দিন শুক্রবার। পৃথিবীর সবচেয়ে নামাজী দেশের মানুষদের সহজে রাস্তায় নামানোর সম্ভবনাকে সামনে রেখেই পদত্যাগের বয়ান সামনে নিয়ে আসা হয় বৃস্পতিবার ! কিংস পার্টি এনসিপির সাথে মিটিং হচ্ছে ইউনুসকে পদত্যাগ না করার কিছু অনুরোধ-নাটক সাজানো , কিছু ঘেরাও কর্মসূচি সহ মবতন্ত্রের নতুন সংস্করণ সামনে নিয়ে আসার প্রাথমিক মহড়া। ইউনূসের ঝুলিতে থাকা প্রায় সব গুলো খেলা সাঙ্গ হয়েছে। নতুন কিছুর সন্ধানে এনসিপির সাথে মিটিং। এই সব কিছুই সাজানো সংলাপ।
তিন
দেশে পদত্যাগের নাটক বিভিন্ন সময়ে হয়ে আসার নজির রয়েছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পরাজয়ের পর শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের ‘ সভাপতি ‘ পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এর পর মিছিলের পর মিছিল , অনুরোধ ইত্যাদি পর শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করে পদে আছেন। ইতিহাসে কোন কিছুই হুবুহু পূনরাবৃত্তি হয় না। তবে অনেক কিছু একই ছায়ায় চলে। ইউনূসের পদত্যাগ একই চক্রে বাধা। ডক্টর ইউনুস চলে যেতে চাইলে তাকে চলে যেতে ঢাক ঢোল দেওয়া হোক। উনি এমন কোন জনবান্ধব না যে উনাকে ধরে রাখতে হবে।
পদত্যাগের ডঙ্কা বাজিয়ে কিংস পার্টি ও কিছু ব্যাক্তির সমবেদনা কুড়ানো শুরু করেছে। সমবেদনা ও সমর্থন জাতীয় বক্তব্যের মূল সুর হচ্ছে ” উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না, দেশের জন্য তাঁকে দরকার। “
ইউনুস দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনকে অমান্য করে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ার ছাড়তে রাজি হয় নাই।সে লোক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ ছাড়বে এটা অসম্ভব ব্যাপার। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়টি ন্যায্য হলেও শেখ হাসিনার অসহিষ্ণু কথা বার্তায় আইনগত বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। প্রসঙ্গতঃ বয়সের বিধিনিষেধের যে আইনে মুহম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন , সেই আইন বাংলাদেশের শুরু থেকেই ছিল ও এখন বর্তমান। এই আইন শেখ হাসিনার সৃষ্টি নয়। এটা ইউনূসের ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের নতুন স্ক্রিপ্ট। এনজিওবাদী রাজনীতি কোনো রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করে না। এনজিও দারিদ্র বিমোচন করে না, বরং এনজিওর রাজনীতি দরিদ্রতা দীর্ঘায়িত করে।
চার
বাংলাদেশের সেনাবাহিনি উৎপাদন বিচ্ছিন্ন। এই সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নির্ভর করে বিদেশের মিশনের সৈন্য পাঠানোর বাণিজ্যের উপর। দেশের রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ দেশের মাটিতে বিদেশী সৈন্য দেখতে আগ্রহী নয়। তবে বাংলাদেশের সৈন্য অন্যদেশে যেয়ে গুম- খুন ও সাম্রাজ্যবাদীদের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করুক সে বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। বাংলাদেশে এখন সামরিক বাহিনী ও ইউনুস সরকারের শাসন চলছে। সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের বিরোধকে মববাজি দিয়ে সমন্বয়ের পথ নিয়েছে ইউনুস সরকার। এই মব বাজির প্রধান টার্গেট হচ্ছে ১৯৭১ সালের গঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্র। কোন দেশের সেনা প্রধানের নিবার্চন দাবির নজির নেই। বাংলাদেশে সেনা প্রধান নির্বাচনের সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। দুনিয়া জোড়া বেসামরিক লোকজন নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু এই দেশে বেসামরিক লোক যারা গণতন্ত্রের ভয়াবহ সমর্থক পরিচিত তারা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা গড়িমসির পথ বেছে নিয়েছে। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামো ভেঙে পড়তে চলেছে। শুরু থেকেই ইউনুস ও এনসিপি নানান অজুহাতে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। ইউনুস সরকার ও এনসিপি এমন একটি জুটি যারা গণতন্ত্রের জন্য চেঁচামেচি করেছে। কিন্তু নির্বাচন বিমুখ। ইউনুস মববাজরা নানান রাজনৈতিক স্লোগানের আড়ালে দেশজুড়ে এক অরাজক অবস্থা কায়েম করেছে। জন প্রতিনিধিত্বহীন সমাজে অভ্যুত্থানের দোহাইয়ে অনেক অনাচার হয়েছে। ইউনূসের পদত্যাগ অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলগত হুমকি। তবে ইউনূসের প্রস্থান যে কোন ভাবেই হতে পারে। ইউনূসের প্রস্থান কোন দূরবর্তী বিষয় নয়।


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!