শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

জামায়াতের ভুল ও ক্ষমার নাটক ! – যমুনা রহমান

লেখক
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের অভ্যুদ্বয়ের সশস্র বিরোধিতা করেছিল ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধে পাকিস্তান রাষ্ট্রের গণহত্যার সহযোগী হিসাবে কাজ করেছে। রাজাকার – আলবদর বাহিনী জামায়াতে ইসলামের তৈরী। যুদ্ধত্তোর বাংলাদেশের সকল শাসক গোষ্ঠী বিভিন্ন মাত্রায় জামায়াত ও ইসলাম পন্থী রাজনীতিকে রক্ষা ও পৃষ্টপোষকতা করেছে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবর রহমানের খুনের পর এই পৃষ্টপোষকতা উচ্চতর মাত্রা পেয়েছে। ২০২৪ সালের হাসিনার পতন ও পলায়নের পর জামায়েত ও অন্যান্য ইসলাম পন্থীরা ক্ষমতার ছায়া সঙ্গী। আওয়ামীলীগের শাসনামলে জামায়াতকে বাগে আনতে হাসিনা কওমি মাদ্রাসাকে পৃষ্টপোষকতা করেছে। এই পৃষ্টপোষকতা রাষ্ট্র ও সমাজের সকল ক্ষেত্রে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার বিকাশ ঘটেছে। প্রশাসন – ব্যবসা বাণিজ্যে ইসলামপন্থিরা জাকিয়ে বসেছে। আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর অনুপ্রবেশ হাসিনা শাসনের পতনের অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম শেখ হাসিনা স্বৈরশাসন ও পারিবারিক কল্প কাহিনী প্রচারে ব্যস্ত থেকেছে। শেখ মুজিবর রহমানের ভিন্ন বাংলাদেশের ইতিহাস নেই। এই সুযোগকে ব্যাবহার করে শেখ কামাল, জমাল , সুলতানা কামাল , সহ শেখ মুজিবের বধিষ্ণু পরিবারের লোকজনের নামের বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী , সরকারি দিবস ঘোষণার মত বিষয় গুলো মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিরূপ মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়ক। এই আলো আধারিতে ধমীয় রাজনীতির বিকাশ শক্তিশালী হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনের ১৫ বছর।

শেখ হাসিনার পতনের পর হাসিনা বিরোধিতার অজুহাতে মুক্তিযুদ্ধের উপর নগ্ন ভাবে আক্রমণ চোখে। মুক্তিযুদ্ধের উপর আক্রমনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ দানা বাড়তে শুরু করেছে। এই ধারায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান রাষ্ট্রের গণহত্যার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী সহ বিভিন্ন ইসলামী দল পাকিস্তান রাষ্ট্রের জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যার সহযোগী ছিল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময়ে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছে। গণহত্যার দায়দায়িত্ব পাকিস্তান বাহিনী ও জামায়েত ইসলামীদের। সমাজের মধ্যে জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়কে নাকচ করে দিয়ে রাজনীতি করা সামান্য হলেও কঠিন। ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয়কে ধামাচাপা দেওয়ার নানামুখী রাজনৈতিক বয়ান তৈরী করা হয়েছে। ” দ্বিতীয় স্বাধীনতা ” জুলাই যোদ্ধা ” ” জুলাই সনদ ” জুলাই ঘোষণা ” এই প্রক্রিয়ার অংশ। পাশাপাশি নানান আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকাকে হালকা করার চেস্ট করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী প্রায়শঃ বলে থাকে তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে ছিল। রাজনৈতিক ভাবে অখন্ডতার পক্ষে থাকা আর অখণ্ডতার দোহাই দিয়েই লক্ষ-লক্ষ মানুষ হত্যার সাথে যুক্ত থাকা পুরোপুরি পৃথক বিষয়। জামায়াতের এই অপচেষ্টার অংশ হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ২২ অক্টোবর ২৫ নিউইয়র্ক বলেছেন ” সাতচিল্লশ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের আজ ২২ অক্টোবর রাত ৮টা ১১ মিনিটে পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যে যেখানে যত কষ্ট পেয়েছেন, আমরা বিনা শর্তে তাঁদের কাছে মাফ চাই। এটা গোটা জাতি হলেও চাই, ব্যক্তি হলেও চাই। কোনো অসুবিধা নাই।’ জামায়াতের এই বক্তব্য ১৯৭১ সালের গণহত্যা পাশ কাটিয়ে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার চেষ্টা করছে।

রাজনৈতিক ভুলের জন্য বিশ্ব ব্যাপী একটি স্বীকৃত পথ ও প্রথা প্রচলিত আছে। সাধারণভাবে দলের মধ্যে আলোচনার পর সুনিদৃষ্ট সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কোন বিষয়ের জন্য ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে তার উল্লেখ্য থাকে। হটাৎ করে দেশে বা বিদেশে গিয়ে ভাসাভাসা কথায় ক্ষমা চাওয়ার কোন গুরুত্ব ও সদিচ্ছা বহন করে না। ক্ষমা চাওয়ার ভাষাও বেশ অভিনব ” কেউ যদি কষ্ট পান, কারও যদি কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে” .। শফিকুর রহমান নিশ্চিত নন তিনি কিসের জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন। ১৯৭১ সালে গণহত্যায় অংশ নেওয়া কোন মামুলি রাজনৈতিক ভুল নয়। এই ” ভুল” বিচার যোগ্য অপরাধ। গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ। দলীয়ভাবেবেসামরিক নাগরিক দিয়ে বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি হানাদারদের নক্সায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে জামায়াতে ইসলামী । বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ঠেকিয়ে হিসেবে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত হওয়ার পরও সৌদি আরবসহ মুসলিম-প্রধান দেশগুলোতে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় জমিতে ইসলামী সক্রিয় ছিল। এই সব অপরাদের জন্য সুনিদৃষ্ট ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা বিকল্প নেই। ‘যদি’ ‘ভুল’ করি মার্কা ক্ষমার কথা বার্তা জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা। এই মাফ চাওয়া নির্বাচন কেন্দ্রিক। শুধু ক্ষমা চেয়ে যদি কোনো দল পার পায়, তাহলে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে হত্যার জন্য আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা চায়—তাহলে তাদের অপকর্ম শেষ হয়ে যায় না। জামায়াতকে ৭১’র মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য সুস্পষ্টভাবে ক্ষমা চাইতে হবে,এর আগে যত ক্ষমা চাকনা কেন সবই তাদের মিথ্যা নাটক ।

 


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!