বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১০ অপরাহ্ন

পান্থকুঞ্জে উমামা ফাতেমা : গায়েবি কথাবার্তা দিয়ে অভ্যুত্থানকে জাস্টিফাই

অপু সারোয়ার
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫

‘ নব গঠিত ‘ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। হাসিনা শেখের পতন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন উমামা ফাতেমা । সেই সময় উমামা ফাতেমা ছাত্র ফেডারেশন নামক আধা বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে আধা বামপন্থাকে মাড়িয়ে রূপান্তরিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সেপ্টম্বর ২০২৪।

জুলাইয় ২০২৪ সালের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন- ছিল বিভিন্ন মত পথের ছাত্রদের সাংগাঠনিক কাঠামোহীন রাজনৈতিক মঞ্চ। হাসিনা শেখের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঞ্চের পরিসমাপ্তি হওয়ার কথা ছিল। এই নামের সাথে আপামর ছাত্ররা জড়িত ছিল। কিছু সংখ্যক ছাত্রের এই নাম ব্যবহার করা নৈতিক ভাবে খুব বেশি বিবেচনা প্রসূত নয়। হাসিনা শেখের পতনের পর প্রধানতঃ ছাত্র অধিকার নামের সংগঠনের উদ্যোগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাম একটি ছাত্র সংগঠনের জন্ম দেয় মোহাম্মদ ইউনুস সরকারের ছাত্র থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত উপদেষ্টারা। এই ধারাতেই গড়ে উঠে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই দুইয়ের সংযোগে ‘কিংস পার্টি ‘ গড়ার চেষ্টা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ও অবকাঠামো আত্তীকরণ করে যে নব বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠার প্রক্রিয়াতে উমামা ফাতেমার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। দেশের প্রধান গণমাধ্যম গলাচিপা থেকে ফাঁসিতলা যে কোন জায়গায় ‘নব’ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ছিটেফোঁটা সংবাদকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করছে।

১ জুলাই ২০২৪ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন একপর্যায়ে গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার সেই অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলন পরিচালনায় ৮ জুলাই ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৩ আগস্ট তা বাড়িয়ে ১৫৮ সদস্যের করা হয়। ২২ অক্টোবর ২০২৪ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম বিলুপ্ত করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২২ অক্টোবর ২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই- অগাস্ট কমিটি বিলুপ্তিকরণ একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ ছিল। তবে কেই সাথে নতুন এক তরফ ভাবে করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার অগণতান্ত্রিক।

এর পরে ২১ নভেম্বর ২৪ আবার ১৮ সদস্যের নতুন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২৪ রাত ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নির্বাহী কমিটি প্রকাশ করা হয়।এই কমিটির কমিটিতে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান কিংবা আদিবাসী-উপজাতির কোনো প্রতিনিধি নেই। এখানে বহুত্ববাদ বিলীন হয়ে গেছে । বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হওয়ার সঙ্গত কারণে উমামা ফাতেমা একজন গুরুত্ব পূর্ন মানুষ হয়ে উঠেছেন। নানা বিষয়ে উমামা ফাতেমার বক্তব্য স্বাভাবিক ভাবে গণ মাধ্যমে উঠে আসছে। অধিকাংশ বক্তব্যই ইউনুস সরকারের সাফাই মূলক এবং সরকার যা বলতে আগ্রহী তা আগে ভাগে বলে সরকারি বক্তব্যের পক্ষে জনমত তৈরী করছেন।

ইউনুস সরকারের সাফাই মূলক বক্তব্যের বাইরে ১১ জানুয়ারি ২০২৫ বেশ শক্ত ভাবে ইউনুস সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমালোচান করছেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণের প্রকল্প বাতিলের দাবিতে পান্থকুঞ্জ পার্কে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন উমামা ফাতেমা। এই সমাবেশে উমামা ফাতেমার বক্তব্য বেশ সাহসী। ” যাঁরা গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি হয়ে সচিবালয়ে ক্ষমতায় অধীন হয়েছেন, সেই মানুষগুলোই সব থেকে বেশি জনবিরোধী আচরণ করছেন। একটা অভ্যুত্থান এক শ্রেণির মানুষকে আকাশের চূড়ায় নিয়ে যায়, আরেক শ্রেণির মানুষকে কোথাও জায়গা দেয় না। ” কথাগুলো বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

ঢাকার কারওয়ান বাজারে পান্থকুঞ্জ পার্কের সমাবেশ ছিল ঢাকা শহরে টিকে থাকা অল্প কিছু গাছ রক্ষা আন্দোলন। উমামা ফাতেমার সংহতি বক্তব্য গাছ রক্ষার আন্দোলনকে কিছুটা হলেও সাহস যোগাবে। এর চেয়েও বড় কথা এই ন্যায্য ও অরাজনৈতিক আন্দোলনকে হাসিনা শেখ বা ভারতের ষড়যন্ত্র হিসেবে তকমা দেওয়ার পথকে সাময়িক ভাবে রুদ্ধ করবে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণের প্রকল্প বাতিলের দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে পান্থকুঞ্জ পার্কে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক সমাবেশ হয়েছে । শহর গুলোকে বাসযোগ্য করার বিষয়কে কোন সরকারই কখনো প্রাধান্য দেয়নি। দেশের প্রকৌশলীরা গাছ – পরিবেশ বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে পরিকল্পনা করতে নিদারুন ভাবে বার্থ্য হয়েছে চলেছেন। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস , জলাশয়-পুকুর ভরাট , নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ তৈরী দেশকে বসবাস অযোগ্য করে তুলেছে। উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেন, ” ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করার মতো বিষয়কে অন্তর্বর্তী সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে না। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিধ্বংসী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কথা বললে তা শোনা হতো না। এটা খুবই দুঃখজনক যে একটা গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হচ্ছে।” রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে একমত না হয়েও পরিবেশ আন্দোলনে ন্যায্য বক্তব্য সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

উমামা ফাতেমার সাময়িক ইউনুস বিরোধী বক্তব্যে খুব বেশি আশান্বিত হওয়ার কোন কারণ নেই। এই সব ক্ষত খাটো বিরোধিতা সংকট থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখার কৌশল। আবার কখোন কখন সরকারের একটু সুবিধা জনক অবস্থা তৈরী করা। উমামা ফাতেমা অন্যদের মত অনির্বাচিত সরকারকে দীঘস্থায়ী করতে আগ্রহী। উমামা ফাতেমার বক্তব্যে আরেকটি সত্য বেরিয়ে এসেছে ” সরকার [ ইউনুস ] এ বিষয়গুলোকে আমলে নেয়নি। তারা শুধু গায়েবি কথাবার্তা, মুজিববাদিতা, মানে খুবই গায়েবি কথাবার্তা দিয়ে অভ্যুত্থানকে জাস্টিফাই করতে চায়।” এই উপলব্ধির পরেও কি ইউনুস সরকারের চারপাশে উমামা ফাতেমা ঘুরঘুর করবেন প্রাক্তন ‘ আধা বাম ” উমামা ফাতেমা ?

========
সহায়ক তথ্য সূত্র:
১. পান্থকুঞ্জে সমাবেশে উমামা ফাতেমা : গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া ব্যক্তিরাই এখন সবচেয়ে বেশি জনবিরোধী। ১১ জানুয়ারি ২০২৪। প্রথম আলো।
২.বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা। ২২ নভেম্বর ২০২৪। যুগান্তর।
৩.বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা। ২২ নভেম্বর ২০২৪। প্রথম আলো।
৪.ছাত্র ফেডারেশন থেকে সরে গেলেন উমামা ফাতেমা। ২২ সেপ্টম্বর ২০২৪। বাংলা নিউজ ২৪। https://banglanews24.com.

* সাংবাদিকতার কাকতলীয় অলসতা ! যুগান্তর ও প্রথম আলো .বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা নিয়ে একই শিরোনামে প্রতিবেন প্রকাশ করেছে। কপি – পেস্টের যুগ কিনা !


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!