২০ জানুয়ারী ২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় এবং রিপাবলিকানদের কংগ্রেসে নিয়ন্ত্রণ বিশ্ব অর্থনীতি এবং ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে বৈশ্বিক বাজার এবং অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত মন্তব্য করার উপযুক্ত সময় নয়। তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিপর্যয়কর মূল্যস্ফীতির অবসান, শুল্ক আরোপ, বড় ধরনের কর হ্রাস, নিয়মকানুন প্রবর্তন হচ্ছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। ট্রাম্পের রাজনৈতিক অঙ্গীকার গুলো বাস্তবায়নে নানা ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধার সম্মুখীন হতে হবে। এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের নিবার্চনী অঙ্গীকার গুলোর কোন বিস্তারিত বিবরণ নেই। এই অঙ্গীকার গুলো বাস্তবায়নে অর্থায়ন কিভাবে হবে এর কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। কেউ কেউ মনে করেন ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নীতিগুলোর একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে সোজাসাপ্টাভাবে এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হওয়ার পথ নেই।
ট্রাম্পের প্রথম দফা নির্বাহী আদেশের বলি অনিবন্ধিত অভিবাসীরা। সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই অভিবাসন নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সই করেছেন একাধিক নির্বাহী আদেশে। যদিও এই আদেশের বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, ট্রাম্প জন্মগত নাগরিকত্ব বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন। অর্থাৎ- যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা আর আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে গণ্য হবেন না। জন্মগত নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেই আছে । এই আইন পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। মার্কিন নাগরিকত্ব-গ্রিনকার্ড অর্জনের একটি সহজ এবং জনপ্রিয় পথ হচ্ছে মার্কিন ভূখণ্ডে সন্তান জন্মদান। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ওই শিশুর বয়স ১৮ পার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বড় করা এবং দেখাশোনা করার জন্য তার বাবা-মাকে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। ট্রাম্পের নাগরিকত্ব’ আইন অধ্যাদেশ ১৪০ বছরের পুরোনো আইনকে বাতিল করে দিচ্ছে।
ট্রাম্পের আদেশ যাই হোক বাতিলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় আইনি লড়াই চলার সম্ভবনা রয়েছে। ট্রাম্পের নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রভাব বাংলাদেশের উপরে আসবে। আমেরিকায় বেশ কয়েক হাজার অনিবন্ধিত বাংলাদেশি অভিবাসীর বসবাস। ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের উপরে আসবে । প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব এবং পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন ইচ্ছুক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা আরও যাচাই – বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে পারেন। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বাস্তবায়িত হলে অভিবাসীদের মাথাপিছু জিডিপি পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কমে যাবে। অভিবাসীদের অনুপস্থিতি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড তুলনা মূলক ভাবে কম হবে , এর প্রতিফলন ঘটবে জিডিপিতে।
ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে তিনি আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। এই নীতির ফলে চীনকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। ট্রাম্পের ট্যারিফ প্রস্তাবনা নিশ্চিতভাবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ডেকে আনবে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারকদের পণ্যবিক্রি কমিয়ে দেবে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, অন্য দেশগুলোও যদি মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ শুরু করে তাহলে বিশ্ববাসীকে বাণিজ্যযুদ্ধের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলা করতে হবে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত সুরক্ষাবাদী নীতি অনুসরণ করে । ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে প্রশাসনের কঠোর বাণিজ্য নীতির কারণে ভারত তার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারিয়েছিল। মার্কিন পণ্যে উঁচু হারে শুল্ক আরোপ করার কারণে ট্রাম্প ভারতের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে ।ভারতের রফতানির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের লোভনীয় বাজারে ভারতের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল করতে পারে। বিশেষ করে আইটি এবং টেক্সটাইলের মতো শিল্পগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, শুল্কের হুমকি আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে ভারতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে। এতে করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।