বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

মে দিবস ও অজানা শঙ্কায় বাংলাদেশ – বুলবুল তালুকদার

বুলবুল তালুকদার 
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

“খোলা জানালা”- প্রথমেই ছোট্ট একটি জোকস্ বলি:

একজন শ্রমিক কোট কাচারিতে সামান্য ও খুবই নাজুক একটি মামলায় জীবনের ঘাম ঝরানো টাকা পয়সা উকিলকে দিতে দিতে হয়রান হয়ে কোন একদিন উকিলকে গাধা বলে বসে। গাধা বলাতে উকিল মশাই চরম ক্ষেপে গিয়ে উল্টো সেই শ্রমিকের বিরুদ্ধেই মানহানির মামলা করে বসে। অতঃপর সেই শ্রমিকের আদালতের বিচারে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং তিন দিনের জেল হয়।
মামলার রায় দেখে শ্রমিকটি জর্জ সাহেবকে সহজ- সরল মনে বলেন, স্যার বুঝলাম না এটা কেমন বিচার? এত টাকা জরিমানা তবে জেল মাত্র তিন দিনের। এটা কি হিসেবে বিচার করলেন?
জর্জ সাহেব উত্তরে বলেন, আপনি উকিলকে অপমান করেছেন বলেই তিন দিন জেল।
শ্রমিকটি আবার জিজ্ঞেসা করে, স্যার এক লাখ টাকা তাহলে কিসের জন্য জরিমানা?
উত্তরে এবার জর্জ সাহেব বলেন, উকিল যে গাধা এটা বলে আপনি রাষ্ট্রের “গোপন তথ্য” ফাঁস করে দিয়েছেন বলে।
যা হোক, লিখতে চেয়েছিলাম মে দিবসে কৃষক- শ্রমিক- মেহনতি মানুষদের নিয়ে। সেখান থেকে সরে এসে ছোট্ট করে দেশের আগামীর ভবিষ্যত নিয়ে দুটি কথা লিখছি। তবে হ্যা, মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ডের সকল কৃষক- শ্রমিক- মেহনতি মানুষের কল্যান কামনা বরাবরের মতন থাকবে। কেননা বিশ্ব যদি প্রাকৃতিকভাবেও ধন সম্পদে ভরেও যায়, বিনা শ্রমিকে বিশ্ব অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে যে। শ্রমিকের মূল্য আশা করছি ছোট্ট এই বাক্য দিয়েই অনুধাবন হবে।
পুরানো লেখার কিছু কথা নতুন করে লিখতে হচ্ছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে। গত বছর মে মাসের (সম্ভবত) শেষের দিকে “লু – হাওয়া” নামে একটি লেখা লিখেছিলাম শুদ্ধস্বর পত্রিকান্তে। বিশ্ব পরাশক্তিদের বিশ্বে ক্রিয়া কলাপ বরাবরই ভয়ানক পথে চলে। পরাশক্তিদের ক্রিয়া এতটাই গভীরতার সাথে হয় যে, আমাদের মতন সাধারণ জনগণের সেই সমন্ধে মূলত কোন প্রকার ধারণাই থাকে না। বাস্তবিক অর্থেই আমরা সাধারণ জনমানুষেরা বিশ্বে মূলত বিশ্ব রাজনীতি আর অর্থনৈতিক খেলায় সামান্য ছোটো পোকার মতন। সাধারণ জনমানুষের বিশ্বে মূলত কোন মূল্যায়ন হয় না। আরও সহজভাবে বললে বলতে হয়, বিশ্ব রাজনীতি আর অর্থনীতিতে সাধারণ মানুষেরা বরাবরই হিসেবের বাহিরে। বিশ্বে ক্ষমতার কাছে বা ক্ষমতার জন্য কোন অঞ্চলে মানুষের কত মৃত্যু হলো? বিশ্ব পরাশক্তিদের নিকট ওগুলোর হিসেবে রাখার প্রয়োজনটাও মূলত থাকে না। অথচ ক্ষমতা বলেন, বিশ্ব রাজনীতি বলেন বা বিশ্ব অর্থনীতি বলেন, সব কিছুর পিছনের উপসর্গ কিন্ত মানুষকে ঘিরেই।
যা হোক, সেই পুরানো লেখাতে উল্লেখ ছিল মার্কিন মুল্লুকের জো বাইডেন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু সাহেবকে নিয়ে একটি কথা চালু ছিল। লু সাহেব কোন দেশ ভ্রমণে গেলেনতো সেই সরকারের পতন নিশ্চিত। স্মরণ করুন, পাকিস্তানে ইমরান খান মোটাদাগে ভঙ্গুর পাকিস্তানকে একেবারে মন্দ চালাচ্ছিলেন না। অন্তত পক্ষে, পাকিস্তানের মতন সেনাদের দেশে ইমরান খান বেশ এগিয়েছিলেন বটে। কতটুকু ভাল করেছিলেন? সেটার উত্তর অবশ্যই বহুবিধ হবে এবং সেটা আপাতত আপেক্ষিক হিসেবে গড়াবে। থাক সে হিসেব। তবে ভিন্ন একটি কথা বলি। পৃথিবীর সব দেশেই একটি সেনা বাহিনী থাকে বা আছে। তবে পাকিস্তান পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যে দেশটি মূলত সেনাদের দেশ। বলা যায়, পৃথিবীতে সেনাদের একটি ও একমাত্র দেশ আছে এবং সেটা হলো পাকিস্তান। জানি না বুঝাতে পারলাম কিনা? তবে পাকিস্তানের জন্ম থেকেই আজ অবধি শাসনকাল ও শাসন ব্যবস্থার দিকে নজর দিলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার অনুধাবনীয় হবে। আলাদা করে বুঝিয়ে লেখার কোন প্রয়োজন হবে না।
সেই পাকিস্তানে মার্কিন মুল্লুকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু সাহেব ঘুরে গেলেন অতঃপর ইমরান খানের পতন হলো। স্মরণ করুন বাংলাদেশেও গতবছর জুনে লু সাহেব ঘুরে গিয়েছিলেন এবং বিটিভিসহ বিভিন্ন টিভিতে গরম ভাপের পাটিসাপটা ও ভাপাপিঠা খেয়ে বেশ হেসেছিলেন এবং বাংলাদেশ প্রেম দেখিয়েছিলেন। আরও স্মরণ করুন (ঠিক পাকিস্তানের মতন), জুলাই- আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পাঁচ আগস্ট বাংলাদেশের সরকারের পতন ঘটে। কতটা মিল বা অমিল, নিজেদের মতন করে ভেবে নিন।
অতঃপর পরবর্তীতে সকল বিষয়েই আমাদের সকলের বেশ জানা। তবে আমরা ভুলে বসেছি লু কে নিয়ে প্রচারিত সেই বয়ানের কথা। লু গেছে তো সরকারও গেছে। ধারণা করি বিগত সরকারের লোকজন লু এর গরম পিঠার ভাব এখন নিশ্চয়ই হিসেব কষেন তবে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এখানেই একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতাশীনদের রাজনীতির হিসেব চলে আসে। উদহারণস্বরুপ বলা যায়, বিগত সরকার এত এত উন্নয়ন করার পরেও মানুষ সেগুলোর কোন মূল্যায়ন না করে কেন রাজপথে নেমে আসলো? মার্কিনিদের লু এর মতন একটি শক্তি কেন সফল হলো? সহজ উত্তর হলো ক্ষমতাশীনরা জনমানুষদের নিয়ে বা জনমানুষের সাথে পলিটিক্স না করে পলি ট্রিক্স করেছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং সেটা আবার নিম্নপক্ষের গণতন্ত্রের বিকাশ না ঘটিয়ে। রাজনীতির খেলাটাই চলে মানুষের সাথে। হ্যা বিশ্ব রাজনীতির হিসেবটা একেবারেই ভিন্ন কারণ সেখানে চলে অস্ত্রের দ্বারা ক্ষমতা আর অর্থনৈতিক খেলা। তবে একটি একক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটা চলে না। চলতে হয়ে জনমানুষের দ্বারা। সেখানে ফেইলর’তো, রাষ্ট্রের উপর ভিন্ দেশী পরাশক্তির আগমন সহজসাধ্য হয় যা ইতিমধ্যেই আমাদের দেশে শতভাগ অনুধাবনীয় নিশ্চয়ই।
বাস্তবতা হচ্ছে আমরা বিশ্বের মাটিতে সর্বদাই সর্বদিক থেকেই কমজোর রাষ্ট্র। অনেকটা টিনের ঘরের মতন এবং ছিদ্রযুক্ত। ছিদ্র আছেতো বাতাস ঢুকবেই। সেই টিনের ঘরের মতন ছিদ্রযুক্ত রাষ্ট্র আমরা বাংলাদেশ। এত কমজোর রাষ্ট্র ততক্ষণ পর্যন্ত ভাল থাকতে পারে যতক্ষণ রাষ্ট্রের সকল নাগরিক ও রাজনীতিতে নিম্নের পক্ষে একতা থাকে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে জনস্বার্থে। সেটার চরম অভাব আমাদের রাষ্ট্রে বরাবরই ছিল জাতীগতভাবে এবং এই অভাবটাই ছিল জাতির দুর্ভাগ্য এবং ফলাফল টিনের ঘরে এখন লু হাওয়ার প্রবলতা ও গতি খুব দ্রুতই ভোগাবে বলেই অনুমেয়। বিশ্ব পরাশক্তিদের রাষ্ট্রের নীতিতে সর্বদাই একই থাকে। হোক সেই লু হাওয়া মার্কিনিদের ভেমোক্রেট বা লিবারেল গ্রুপের। তাতে করে পরাশক্তি মার্কিনিদের জাতীয় স্বার্থে কোন ব্যাঘাত ঘটে না। রাষ্ট্রের স্বার্থ ওদের সর্বদাই অগ্রগামী এবং সেটার ফসল মার্কিনীরা ঘরে তুলবেই তুলবে। বলছিলাম অত্র অঞ্চলে ভৌগলিক দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশ হলো স্বর্ণমূল্যের। সেই ফেসাদেই আমারা আমাদের নিজেদের জাতিগত ভুলের কারণেই আজকের স্বর্ণসম মূল্যের ভূমিটি ধীরে ধীরে পরাশক্তিদের হাতেই তুলে দিচ্ছি।
কেন এভাবে বলছি? পৃথিবীতে একটি কথা চালু আছে, মার্কিনিরা কোন রাষ্ট্রের বন্ধু মানেই শত্রুর প্রয়োজন হয় না। এই যে মানবিক করিডোরের আবদার বা পরোক্ষভাবে বলা যায় আদায় হচ্ছে, যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশটির ভূখণ্ডের উপর, কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, “যাহাই মানবিক করিডোর,তাহাই মার্কিন সামরিক ঘাঁটি”। এখন দেখার বিষয় কতটুকু আমরা সয়ে নিতে পারবো কেননা এটা বলাই যায়, মার্কিনিরা এই ভূখণ্ডে এসে গেছে। এটা ঠেকানোর শক্তি বা সামর্থ এই ভূখণ্ডের আর নেই। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতন মার্কিনিদের হুকুমেই চলবে, সেটা নিশ্চিত বলাই যায়। এখন আর প্রশ্ন তুলেও কিছু হবার নয়, কে দোষী? আর কে দোসর? ৫৪ বছর ধরে যে স্বাধীনতা ছিল, যে স্বাধীনতার মূল্য আমরা সকলেই অনুধাবন করিনি এবং মূল্য বুঝিনি। সেই স্বাধীনতা বিপন্ন হবেই হবে।
আগামীতে দেশের জনমানুষেরা যদি জাতির স্বার্থে এখনও একীভূত হতে না পারে তাহলে ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতির আসল রূপ দেখবে। লেখার শুরুতেই ছোট্ট একটি জোকস্ বলেছিলাম। না এই লেখার সাথে ওই জোকস্ মিলাতে চাই না কারণ রাষ্ট্রের একটি সিরিয়াস ইস্যুতে জোকস্ যায় না যে। তবে রাষ্ট্রের তথ্য আপাতত ইহাই যা কিছুটা লিখেছি। জোকস্ এর মতনই হালকাভাবে রাষ্ট্রের গোপন তথ্য প্রকাশে (উকিলরা নিশ্চয়ই গাধা হন না/ আমার বলা কথাগুলোও নিশ্চয়ই গোপন তথ্য নয়) আমাকে জরিমানার সুযোগ কম কেননা এখন রাষ্ট্রের সকল বিষয় সবার নিকট পরিপূর্ণ রূপেই নখদর্পণে আছে যে। প্রকাশ বা অপ্রকাশের প্রশ্ন আর জড়িত নয় কেননা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলেরাই জানান দিচ্ছেন, রাষ্ট্রের সীমান্ত তাদের হাতে নেই এবং উনারাই জানান দিচ্ছেন রাষ্ট্র নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অপরদিকে জনমানুষের নেই কোন তাড়া, নেই কোন সাড়া, নেই কোন আক্ষেপ বা ভ্রূক্ষেপ। কেন জানি মনে হচ্ছে জনমানুষের চোখের সামনে বিরাট একটি বায়স্কোপ বাক্স। দেখতে থাকো। মহান মে দিবসে মানুষের কল্যান হোক সমতায়। যদিও সমতায় কল্যান চাওয়াটা অনেক বড় চাওয়া। চাইবো যখন মন খুলেই চাওয়া উত্তম।
বুলবুল তালুকদার
অষ্ট্রিয়া- লিঞ্জ
সমসমাজ পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য
সমসমাজ.কম


একই ঘরনার সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!